চট্টগ্রামে হেফাজত নেতাদের দাবি করা তিন আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৮ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে হেফাজত নেতাদের দাবি করা তিন আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও পটিয়া, এই তিনটি আসন নিজেদের ভাগে পাওয়ার দাবি জানিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা।

তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই দাবি উপেক্ষা করেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আসন তিনটিতেই সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।

ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর।

হেফাজতের হেড কোয়ার্টার খ্যাত চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

অপরদিকে বড় মাদ্রাসা খ্যাত উপজেলা চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম।

এর আগে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলকে নিয়ে জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের ভোটব্যাংককে নিজেদের দিকে আনতে দলের শীর্ষ নেতারা সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন।

বিশেষ করে গত ১ আগস্ট হাটহাজারী মাদ্রাসায় এবং পরে ঢাকায় হেফাজতের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ছিল বেশ আলোচিত।

তখন হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী গণমাধ্যমকে জানান, ‘‘হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও পটিয়া- এই তিন আসনে তাদের সংগঠনের শক্তিশালী তৃণমূল ভিত্তি রয়েছে এবং সে কারণেই আসন তিনটির প্রতি তাদের দাবিও জোরালো।’’

তাঁর দাবি, এসব এলাকায় ইসলামপন্থী আলেম ও কওমি শিক্ষার্থীদের বড় ভোটব্যাংক রয়েছে, যা নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের এই তিন আসনেই দলের নিজস্ব শক্তিশালী প্রার্থী ও সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। ফলে আসন ছাড়ার বিষয়টি দলীয় উচ্চপর্যায়ের গভীর বিবেচনার ওপর নির্ভর করছে। দলীয় অভ্যন্তরে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের প্রতীককেই কেন্দ্র করে সবাই মাঠে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে হেফাজত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ ব্যানারে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি দল বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বলেও উল্লেখ করেন সংগঠনের নেতারা।

হেফাজতভুক্ত প্রার্থীরা দাবি করছেন, সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ইসলামপন্থী প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তখনো চূড়ান্তভাবে আসন ভাগাভাগির ঘোষণা আসেনি।

তবে ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো জোট হচ্ছে কিনা এবং এই তিন আসন নিয়ে তিনি সিটিজি পোস্টকে বলেন, ‘‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপির সাথে জোট করবে রাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতের অরাজনৈতিকভাবে জোট করার সুযোগ নাই। বিএনপির সাথে হেফাজতের জোট করার কোনো প্রশ্ন'ই আসে না।”

সব মিলিয়ে, হেফাজত নেতাদের দাবি করা তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার ঘটনায় দুই পক্ষের আলোচনার সমীকরণ ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমন্বয় নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আগামী দিনগুলোতে জোট রাজনীতির সার্বিক অবস্থান কোন দিকে মোড় নেয় সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের নজরেই।

ক্যাটাগরি:
চট্টগ্রাম উত্তররাজনীতি