সালিশে পাঁচ তরুণকে 'বখাটে' আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

সালিশে পাঁচ তরুণকে 'বখাটে' আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে পাঁচ তরুণকে ‘বখাটে’ আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় সালিশের নামে দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার নির্দেশে তার সামনেই এ ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকালে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের খুতিরবাজার এলাকায়। এ ঘটনায় সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যচতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শুক্রবার দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে শনিবার রাতে মনিরের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ানের মধ্যে মারামারি হয়।

রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে (৯ নম্বর ওয়ার্ড) জানালে পরদিন রোববার সকালে তার উপস্থিতিতে সালিশ বসে। সেখানে রাব্বি, রিয়ানসহ পাঁচ তরুণকে ‘বখাটে’ আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে বাজার থেকে নরসুন্দর ডেকে এনে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতেই তাদের মাথা ন্যাড়া করা হয়।

ভুক্তভোগী অন্য তিন তরুণ হলেন—শাকিল (১৯), নয়ন সরদার (১৮) এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোর।

এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অপমানের কারণে মুখ লুকিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি থামাতে গিয়েছিলেন অন্য তিনজন। কিন্তু সালিশে তাদের কথা শোনা হয়নি। ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কথা বলছেন না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা বলেন, “যা হয়েছে দুই পরিবারের লোকজন করেছেন। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। তারা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন।”

গ্রাম আদালতের রাঙ্গাবালী উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে সালিশ করার সুযোগ নেই। আর সালিশের নামে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। জনপ্রতিনিধির এমন ক্ষমতা নেই।”

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। এখনো কোনো পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।”

ইউএনও রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সিটিজিপোস্ট/জাউ

ক্যাটাগরি:
ক্যাম্পাস