লগি-বৈঠার ভয়াল তাণ্ডবের ১৯ বছর আজ
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পল্টন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের পরিবারের বিচার দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
.jpg&w=3840&q=75)
আজ লগি-বৈঠার ভয়াল তাণ্ডবের ১৯ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানীর পল্টনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কর্মীরা তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শরিক জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ ওই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই জামায়াত ও শিবিরের ছয়জন নিহত হন এবং বহু লোক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত অনুযায়ী, সেদিন দুপুরে লাঠি-বৈঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় দ্রুত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিহতদের লাশের ওপর উল্লাস ও নৃত্যের বিভীষিকাময় দৃশ্য তখন সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
সংঘর্ষে সূত্রপাতে, ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৪ দল “লগি-বৈঠা আন্দোলন” কর্মসূচি ঘোষণা করে। একইদিনে জামায়াতে ইসলামী তাদের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। সকাল ১১টার দিকে দুই পক্ষের সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষে শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও কর্মী জসীম উদ্দিনসহ ছয়জন নিহত হন। বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী বক্তব্য দিতে গেলে পাশের ভবন থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপের অভিযোগ ওঠে, এবং দফায় দফায় গুলির ঘটনাও ঘটে।
ওই সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর লগি-বৈঠা হাতে নিয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ অক্টোবর রাত থেকেই সারাদেশে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
২৮ অক্টোবরের সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং প্রায় দুই বছর স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্থগিত থাকে।
ঘটনার পরদিন পল্টন মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৭ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও পরে আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। ২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের পর মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
নিহতদের পরিবার এখনও বিচারের আশায় আছে। তাদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার এখনো হয়নি। সম্প্রতি নিহতদের পরিবার ও জামায়াতে ইসলামী মামলাটি পুনরায় সচল করার দাবি জানিয়েছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘‘আইনগতভাবে মামলাটি পুনরায় বিচার প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব, কারণ এটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা নয়। সরকার চাইলে এই মামলার বিচার আবার শুরু করা যেতে পারে।’’
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
একই দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। মঙ্গলবার বিকেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটি ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা। এর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”




.png&w=3840&q=75)