দুর্নীতির প্রতীক জোবেদা এখন রেলের ট্রেনিং একাডেমিতে

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৯ অক্টোবর, ২০২৫

দুর্নীতির প্রতীক জোবেদা এখন রেলের ট্রেনিং একাডেমিতে

দুদকের মামলার আসামি ও রেলের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত চীফ পার্সোনেল অফিসার (চ.দা.) জোবেদা আক্তারকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রামের রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির চীফ ট্রেনিং কর্মকর্তা (সিটিও) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ পার্সোনেল অফিসার জোবেদা আক্তারকে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের, চট্টগ্রামের চীফ ট্রেনিং কর্মকর্তা (সিটিও) পদে বদলি করা হয়েছে।

জনস্বার্থে এ বদলির নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলেও উল্লেখ ছিল উক্ত প্রজ্ঞাপনে।

তবে রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বছরের পর বছর দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত এই নারী কর্মকর্তাকে মূলত তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অপসারণ করা হয়েছে।

নিজেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাগ্নি পরিচয় দেওয়া জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম, তদবির ও আর্থিক দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ। রেলের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগে কোটি টাকার লেনদেনের ঘটনায় মামলার এজাহারে তার নাম থাকলেও প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে রহস্যজনকভাবে নীরব ছিল।

রেল সূত্রে জানা যায়, চাকরির শুরু থেকেই তিনি বেপরোয়া। টাকায় পদোন্নতি, টাকায় বদলি, টাকায় পদায়ন- সব ক্ষেত্রেই ছিল জোবেদার প্রভাব। অনেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি।

এছাড়াও, কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি শেখ মো. লোকমান হোসেনের মেয়ে জিনিয়া নাসরিনের সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে প্রায় ১৪ বছর দ্বৈত পেশায় থাকার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। দুদকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিষয়টি ধামাচাপা দেন তিনি।

অভিযোগ আছে, অবৈধ অর্থে নিজের ভাই ও বোনকে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।

রেলওয়ের বহু কর্মচারী বলেন, জোবেদা ছিলেন রেলের “মাফিয়া রানী”। কার বদলি হবে, কে কোন পদে থাকবে সব ঠিক হতো তার কক্ষেই। যারা টাকা দিত না বা আপত্তি তুলত, তাদের উপর নেমে আসত প্রশাসনিক নির্যাতন।

রেলের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, “বদলি নয়, এটা আসলে প্রশাসনের বাধ্যতামূলক স্বস্তি নেওয়া। তাকে একাডেমিতে পাঠানো হয়েছে যেন আর কাউকে হয়রানি করতে না পারে।”

রেলওয়ের একাধিক সূত্র বলছে, জোবেদা আক্তারের কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চলমান দুদক তদন্ত এখনো শেষ না হলেও প্রশাসনের একাংশ চায়, এই বদলির মধ্য দিয়েই তার অধ্যায় শেষ হোক।

সিটিজি পোস্ট/এইচএস

ক্যাটাগরি:
জাতীয়রেলওয়েচট্টগ্রাম