প্রাণঘাতী গুলির নির্দেশ ‘শেখ হাসিনার’, ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণে নিশ্চিত করল বিবিসি

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৯/৭/২০২৫, ৯:১১:৩৭ PM

প্রাণঘাতী গুলির নির্দেশ ‘শেখ হাসিনার’, ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণে নিশ্চিত করল বিবিসি

বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের অনুমতি দিয়েছিলেন। বিবিসি আই ইউনিট একটি ফাঁস হওয়া অডিও টেপ যাচাই করে এই নির্দেশনার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে। অডিওতে শেখ হাসিনাকে স্পষ্টভাবে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই পাবে, গুলি করবে।”


ফাঁস হওয়া অডিওটি ১৮ জুলাইয়ের এবং তা শেখ হাসিনা ও একজন অজ্ঞাতপরিচয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মধ্যকার কথোপকথন বলে জানা গেছে। বিবিসির অনুসন্ধানে বলা হয়, ওই সময় শেখ হাসিনা গণভবনে অবস্থান করছিলেন এবং সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তারা জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। এরপর ওই নির্দেশনার পর থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দমনে সামরিক মানের রাইফেল ব্যবহারের ঘটনা পুলিশি নথিতে উঠে এসেছে।

বিবিসি জানায়, এই অডিও রেকর্ডিংটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি চলছে। প্রসিকিউশন পক্ষ বলছে, শেখ হাসিনার ওই ফোনালাপের নির্দেশনার ভিত্তিতে সরকারি স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

ফাঁস হওয়া অডিওটির যথার্থতা যাচাই করতে বিবিসি ‘ইয়ারশট’ নামের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়। তারা জানায়, অডিওটি সম্পাদিত নয়, কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। অডিও বিশ্লেষণে বক্তার স্বর, বাক্যচরণ, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নয়েজ ফ্লোর লেভেল সবকিছুই সঙ্গতিপূর্ণ পাওয়া গেছে। এছাড়া অডিওতে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ENF) শনাক্ত করা হয়েছে, যা থেকে ধারণা করা হয় এটি একটি ঘরে ফোনের স্পিকারে বাজানো অবস্থায় রেকর্ড করা হয়েছিল।

ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেন, “এই রেকর্ডিংগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো স্পষ্টভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং মামলার অন্যান্য প্রমাণের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। যাত্রাবাড়ীর ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পুলিশি সহিংসতার অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। এ ঘটনার সময়কার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৩০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল।

বিবিসি আই আরও জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে সেনা সদস্যরা যখন আন্দোলনকারীদের ও পুলিশের মাঝখানে অবস্থান নিয়েছিলেন, তখন গুলিবর্ষণ শুরু হয়নি। কিন্তু সেনারা সরে যাওয়ার পরপরই পুলিশ বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে গুলিবর্ষণ, যার সময় বিক্ষোভকারীরা অলিগলি ও মহাসড়ক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আশ্রয় নেন নিকটবর্তী সেনা ক্যাম্পে। একই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা যাত্রাবাড়ী থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সেখানে ছয়জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়, সেই সময় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কারণে এখন পর্যন্ত ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুখপাত্র বলেন, “কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।”

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন। অধিকাংশই নিহত হয়েছেন সামরিক রাইফেল, শটগান এবং অন্যান্য প্রাণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে, যা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, সাধারণ নাগরিকদের ওপর সহিংসতা, উসকানি, ষড়যন্ত্র এবং হত্যা ঠেকাতে ব্যর্থতার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আওতায় তার সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত হয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে এবং তাদের মধ্যে ৭৩ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, অডিওটি আসল কি না, তারা তা নিশ্চিত নন। দলের একজন মুখপাত্র বলেন, “দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কিংবা প্রধানমন্ত্রী নিজে জনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন–এমন দাবি আওয়ামী লীগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে। প্রাণহানি কমানোর উদ্দেশ্যেই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তা ছিল যৌক্তিক।”

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার, তবে ভারত এখনো সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। টবি ক্যাডম্যান বলেন, শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবেন–এই সম্ভাবনা খুবই কম।

বিবিসি বলছে, বিষয়টি নিয়ে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করলেও সেনাবাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ক্যাটাগরি:
কভার নিউজজাতীয়

কভার নিউজ ক্যাটাগরি থেকে আরো

টেরিবাজারে গলার চেইন ছিনতাইকারী দুই যুবক গ্রেফতার

টেরিবাজারে গলার চেইন ছিনতাইকারী দুই যুবক গ্রেফতার

৮ জুলাই, ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার এলাকায় এক নারীর গলার সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোতোয়ালী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ত...