নির্বাচন বিরোধীদের ৭ নভেম্বরের চেতনায় পরাজিত করতে হবে: আমীর খসরু
নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ৭ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বিলম্বিত করতে চায়, তাদের ৭ নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে পরাজিত করতে হবে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেইটস্থ বিপ্লব উদ্যানের পাশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক আর ইউ চৌধুরী শাহিন এবং ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, আমার সামনে যারা আছেন তারা গেলো ১৫ বছরে জ্বলে-পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। এই খাঁটি সোনায় যেন কোনো দাগ না লাগে, কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে। মনে রাখতে হবে, এই ঐক্যবদ্ধ বিএনপিই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন শেষ হবে না। আগামী তিন, চার, পাঁচ মাস পর্যন্ত দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। গেলো ১৭ বছরের মতোই ঐক্যবদ্ধ থেকে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়, তাই ঐক্য ভাঙার কোনো সুযোগ নেই।
আমীর খসরু আরও বলেন, দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বা ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে, কিন্তু তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন দলের পক্ষ থেকে যাকে নমিনেশন দেওয়া হবে, তার পাশে সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে এবং বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য বড় পরীক্ষা, এবং সবাইকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের মতোই আজ আবার সময় এসেছে গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবেলা করার। যারা নির্বাচন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে, তাদের ৭ নভেম্বরের স্পিরিটে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। জনগণের মালিকানা নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের মাধ্যমে। যারা এই নির্বাচনের পথে বাধা দিতে চায়, তাদের পরাজিত করতে হবে।
জুলাই সনদ নিয়ে বিভক্তি তৈরি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঐক্যমত কমিশন গঠন হয়েছিল সকল দলের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের জন্য। যেসব বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে, সেই ভিত্তিতেই জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে। এখন চ্যাপ্টার ক্লোজ, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা এই সনদের বাইরে গিয়ে নিজেদের দাবি অন্য দলের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়, তারা স্বৈরাচারের পথে হাঁটছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে জনগণের ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় বসে কেউ আগামী সংসদের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। প্রতিটি ঐক্যমত বাস্তবায়ন করা হবে, কিন্তু সাংঘর্ষিক রাজনীতির দিকে যাওয়া চলবে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, সহনশীল রাজনীতি চায়, এবং বিএনপিও এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। নিজের চিন্তা জনগণের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া অগণতান্ত্রিক আচরণ। তাই যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের সঠিক পথে আসতে হবে।
দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি চালানো হয়েছে, যেখানে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে এটি দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কেন হবে? হয়তো কেউ এই ঘটনাকে ব্যবহার করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তাই সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু, দেশের জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আজ থেকে সব নেতাকর্মীকে ধানের শীষের পক্ষে থাকতে হবে। তারেক রহমানের নির্দেশ স্পষ্ট, এখন কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। সবাইকে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে এবং তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারেক রহমান ও গণতন্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। একটি মহল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি, কিন্তু এখন জনগণ ধানের শীষে ভোট দিতে উন্মুখ। যারা পরাজয় আশঙ্কা করছে তারাই নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে। কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না, ধানের শীষ জয়ী হয়ে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, ইনশাআল্লাহ।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতা তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে জনতার কাতারে নিয়ে আসে। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, শহীদ জিয়া দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাই সিপাহী জনতা ৭ নভেম্বর তাকে মুক্ত করে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বসিয়েছিল। তারেক রহমান গেলো ১৭ বছর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন এবং ৫ আগস্টের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে, ইনশাআল্লাহ।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে হবে। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নাজিমুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসে জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, শফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, শওকত আজম খাজা, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মনজুরুল আলম চৌধুরী মন্জু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন বুলু, সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।
সিটিজিপোস্ট/এমএইচডি




