তৃতীয় পাহাড় থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল সুইমিং ২০২৫: স্রোতের বিপরীতে দুঃসাহসী অভিযাত্রা

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৮ নভেম্বর, ২০২৫

তৃতীয় পাহাড় থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল সুইমিং ২০২৫: স্রোতের বিপরীতে দুঃসাহসী অভিযাত্রা

সময় সকাল ১১টা, কক্সবাজারের পেকুয়া উপকূল। নোনাজল ভরা সাগর তখন উত্তাল। ঠিক সেই সময়েই ১০ জন তরুণ সাঁতারু নেমে পড়েন খরস্রোতা কুতুবদিয়া চ্যানেলে। লক্ষ্য— সাঁতরে পৌঁছানো কুতুবদিয়া দ্বীপে, প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের এক চ্যালেঞ্জিং গন্তব্যে।

‘তৃতীয় পাহাড় থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল সুইমিং ২০২৫’-এর এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সী রাব্বি রহমানসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দশজন সাহসী সাঁতারু। উদ্বোধন করেন পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার এএসএম নূরুল অক্তার নিলয়। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওপেন ওয়াটার সুইমিং (বোয়াস)-এর উপদেষ্টা মোহাম্মদ শিমুল চৌধুরী এবং টাইটেল স্পনসর “পাহাড় থেকে ডট কম”-এর প্রতিনিধিরা।

চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য ছিল এক ঘণ্টায়। তীব্র স্রোত, উঁচু ঢেউ, আর লবণাক্ত পানির বাধা পেরিয়ে সবাই যখন নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দেখা গেল সবচেয়ে দ্রুত কুতুবদিয়া পৌঁছান বগুড়ার তরুণ সাঁতারু রাব্বি রহমান। সময় লেগেছে মাত্র ১ ঘণ্টা ৪ মিনিট। ইংলিশ চ্যানেল জয়ী কিশোরগঞ্জের নাজমুল হক সময় নেন ১ ঘণ্টা ৬ মিনিটে, আর বগুড়ার এস আই এম ফেরদৌস আলম পৌঁছান ১ ঘণ্টা ৭ মিনিটে।

ফেরদৌস আলম বলেন, “চ্যানেলের অর্ধেকটা ছিল সহজ, কিন্তু বাকি অংশটা ভয়ংকর কঠিন। প্রতিবার এমন অভিযানে নামার কারণ শুধু রোমাঞ্চ নয়— আমরা চাই পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমাতে মানুষকে সচেতন করতে, সুইমিংয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং নদী-সাগর ঘিরে পর্যটনকে উৎসাহ দিতে।”

পুরো অভিযানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোয়াসের স্বেচ্ছাসেবীরা চারটি ইঞ্জিনচালিত বোটে সাঁতারুদের পাশে ছিলেন। গণমাধ্যমকর্মী, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করেছেন যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।

অভিযান শেষে দরবার জেটিতে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন, পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুজিবুল হক চৌধুরী ও সমাজসেবক মোহাম্মদ আজম।

এই ১০ সাঁতারু— ফাহিম আহমেদ খান, নাছির আহমেদ, খন্দকার শওকত ওসমান, নাজমুল হক, এস আই এম ফেরদৌস আলম, আব্দুল্লাহ আল সাবিত, রাব্বি রহমান, মোজ্জিম হোসেন, মোহাম্মদ তাইএয়ার ও আল আমিন— প্রমাণ করেছেন যে সাহস আর প্রস্তুতি থাকলে স্রোতের দিকও বদলে দেওয়া যায়।

কুতুবদিয়ার ঢেউ যেন আজও তাদের পায়ের ছোঁয়া মনে রাখে— আর এই সাঁতার যেন অনুপ্রেরণা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

ক্যাটাগরি:
কক্সবাজারফিচার