কক্সবাজার-২ আসন: বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ত্রিভুজ সমীকরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ৬ নভেম্বর, ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনের নির্বাচনী সমীকরণ ক্রমেই জমে উঠছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি ঘোষিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। দলটির শীর্ষ ও আলোচিত কয়েকজন নেতা এবার মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
ঘোষিত তালিকায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ১৩টি আসনের প্রার্থীর নাম থাকলেও কক্সবাজার-২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনের প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় নেতৃত্বের অবস্থান, জোটগত সমন্বয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই আসনের প্রার্থী নির্ধারণে সময় নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ঘোষিত তালিকায় পরিবর্তন বা সংযোজনের সুযোগও রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা অনেক আসনেই প্রার্থী দিতে পারেন, আমরাও দিতে পারি। রাজনৈতিক সমন্বয়ের স্বার্থে তালিকায় পরিবর্তনের সুযোগ সবসময়ই থাকবে।”
কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব আসনে পুরোনো এমপিদের প্রতিই আস্থা রেখেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
অপরদিকে, দুটি দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা জল্পনা। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না দলগুলো এককভাবে নির্বাচন করবে নাকি জোটবদ্ধভাবে। যদি জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়, তাহলে শরিক দলের জন্য কক্সবাজার-২ আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।
এনসিপির সঙ্গে জোট হলে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সুজা উদ্দীন মহেশখালী থেকে প্রার্থী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আসনটি এনসিপিকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
উন্নয়ন ও কৌশলগত গুরুত্ব
মহেশখালী-মাতারবাড়ী উন্নয়নের জন্য সরকার ইতোমধ্যে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) গঠন করেছে। এর ফলে এ আসনের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। দ্বীপাঞ্চলভিত্তিক এই এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আসনটিকে জাতীয় রাজনীতিতেও আলাদা গুরুত্ব এনে দিয়েছে।
সম্ভাব্য তিন প্রার্থী আলোচনায়
এই আসনকে ঘিরে বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি জোটের সম্ভাব্য সমীকরণে তিনজনের নাম আলোচনায় রয়েছে— বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহাফুজ উল্লাহ ফরিদ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, এবং এনসিপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সুজা উদ্দীন।
জোটের সমীকরণে অনিশ্চয়তা
বিএনপির প্রাথমিক তালিকায় এবারও আলমগীর মোহাম্মদ মাহাফুজ উল্লাহ ফরিদের নাম নেই, যদিও স্থানীয় পর্যায়ে তিনি সক্রিয় রয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমীকরণে তার ফিরে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকার বিষয়ে সিটিজিপোস্ট জানতে চাইলে আলমগীর মোহাম্মদ মাহাফুজ উল্লাহ ফরিদ বলেন, ‘‘বিএনপির হাইকমান্ডের সাথে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় এই আসনে জামায়াতের প্রভাব কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা উদ্দীনের নামও গুরুত্ব পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তার দৃশ্যমান সমর্থন রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এবিষয়ে এস এম সূজা উদ্দীনের কাছে সিটিজিপোস্ট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহেশখালীর সন্তান। এখানেই আমার বেড়ে উঠা। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এখানকার উন্নয়নমূলক কাজের সাথে আমার সম্পৃক্ততা ছিলো এবং আমি প্রান্তিক মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের চেষ্টা রাখছি। আমার দল যদি চাই তাহলে আমি এই আসনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবো। বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখনো যেহেতু এনসিপি জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাওয়ার প্রসঙ্গে আসে নাই সেক্ষেত্রে দল যা চাইবে সেটাই হবে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজার-২ আসনের ভোট কাঠামোয় দ্বীপ অঞ্চলের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব, দলীয় সংগঠনের ঐক্য এবং জোটের পারস্পরিক সমঝোতাই হবে নির্বাচনের ফল নির্ধারণের মূল উপাদান।




