উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে দালাল চক্র রোহিঙ্গা নারীদের ফেলছেন মৃত্যুর ঝুঁকিতে
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে বসবাস করলেও তারা এখনও অনিশ্চয়তা, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতায় বন্দি। বিশেষ করে নারীরা মানবিক সংকটে পড়ছেন ভয়াবহভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে এই নারীদের একটি বড় অংশ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংঘবদ্ধ দালাল চক্র প্রথমে রোহিঙ্গা নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। কেউ চাকরির আশায়, কেউ আবার পরিবারের দারিদ্র্যতা দূর করার স্বপ্নে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী হন। এরপর দালালরা তাদের টেকনাফের সাগর সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গোপনে আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে ছোট ছোট ট্রলারে করে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই কয়েক দফায় নারীদের সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রাপথে মানবেতর পরিস্থিতির শিকার হতে হয় এসব নারীদের। নৌকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্য ও পানির অভাব এমনকি শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাও বারবার শোনা যাচ্ছে। একাধিক রোহিঙ্গা নারীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ট্রলার ডুবে অনেকের মৃত্যু হলেও দালাল চক্র কোনোভাবেই তাদের দায়ভার নেয় না।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে বসবাসের কারণে তাদের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত, ফলে বিশেষ করে তরুণীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই মনে করছেন, মালয়েশিয়া গেলে তারা নিরাপদ আশ্রয় ও কর্মসংস্থান পেতে পারেন। হতাশা ও এই স্বপ্নের ফাঁদ মানবপাচারকারীদের জন্য বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচার এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে। মানবপাচার বন্ধে শুধু নজরদারি নয়, বরং শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, “আমরা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পে নজরদারি করছি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। তবে দালাল চক্র খুবই চতুর এবং প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল ব্যবহার করছে। ফলে তাদের শনাক্ত করা ও প্রতিরোধ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, "ক্যাম্পের ভেতরে মানবপাচার রোধে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও কোস্টগার্ডও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তবুও চক্রটি ভিন্ন ভিন্ন পথ ব্যবহার করায় পাচার বন্ধে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় নারী ও কিশোরীরা মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত থাকায় বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি পাচারকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কেবল আইন প্রয়োগ করেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরও দায়িত্ব নিতে হবে।
ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, “এখানে আমরা অনিশ্চিত জীবনে আছি। আমাদের মেয়েদের ভবিষ্যৎ নেই। বিয়ে, শিক্ষা বা চাকরি—কিছুই নিশ্চিত নয়। তাই অনেকে দালালদের সঙ্গে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে।”
অন্যদিকে মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ফিরে আসা এক নারী জানান, “আমাদেরকে অনেক কষ্টে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সমুদ্রে কয়েকদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। অনেক মেয়েকে নির্যাতনও করেছে। শেষে ট্রলার ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি আর যেতে চাইনি।”
রোহিঙ্গা নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পথে মালয়েশিয়া গমন শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং বাংলাদেশের জন্য এক নতুন নিরাপত্তা সংকটও বটে। পাচারকারীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত সক্রিয় হচ্ছে, তা রোধে কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। নচেৎ, এই মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সিটিজিপোস্ট/ এসএইচএস
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
কক্সবাজারের ভালুকিয়া পালং গ্রামে প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৩৯০ বস্তা নন-ইউরিয়া সার জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় ডিলার মোহাম্মদ আলীর পুত্র জাহেদুল আলম এর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের ২৫(বি) বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযান চলাকালীন সময় ডিলারের কাছে অনিয়ম ও সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে প্...
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
কক্সবাজারের ভালুকিয়া পালং গ্রামে প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৩৯০ বস্তা নন-ইউরিয়া সার জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় ডিলার মোহাম্মদ আলীর পুত্র জাহেদুল আলম এর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের ২৫(বি) বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিয...