যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশের ২৫টি বোয়িং কেনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র, এমন মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, আলোচনার সময় বোয়িং কেনার প্রসঙ্গটি একবারের জন্যও ওঠেনি। তাদের আগ্রহ মূলত ছিল কৃষিপণ্য রপ্তানিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রতি যে শুল্ক চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে। অপরদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫ বছরে ৩৫ লাখ টন গম আমদানির একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
তবে এই বোয়িং ক্রয় চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, “আমার জানামতে বোয়িং গত বছর মাত্র ১২টি উড়োজাহাজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে তারা ২৫টি বিমান সরবরাহ করতে পারবে হয়তো ২০৩৭ সালে। এত দ্রুত সরবরাহে তাদের সক্ষমতা নেই। তারা তেমন আগ্রহও দেখায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল খাদ্যপণ্য আমদানিতে। বাংলাদেশ প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় তারা এই বাজারে প্রবেশে আগ্রহী। যদি প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কৃষিপণ্য সরবরাহ করা যায়, তাহলে তা বাংলাদেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে।”
এ সময় তিনি জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর দিকেও গুরুত্বারোপ করেন। “গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছি। কিন্তু খাদ্যপণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে যদি ২ বিলিয়ন ডলার বাড়ানো যায়, তাহলে সেটি হবে তাৎপর্যপূর্ণ। সেটা হোক তুলা, সয়াবিন, গম বা ভুট্টা সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বোয়িং প্লেন আপনি প্রতিদিন কেনেন না।”
বোয়িং কেনা প্রয়োজন ছিল কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিমান বাংলাদেশের পরিচালন সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক অবস্থার দিকে তাকালে বোঝা যায়, গত বছর দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহন করেছে মাত্র ২০ লাখ যাত্রী। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি যাত্রী অন্য মাধ্যমে গেছে। এই বাজার ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। ২৫টি বিমান সে তুলনায় কিছুই না, এর থেকেও বেশি প্রয়োজন।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে এবং এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করেছেন ২০ শতাংশ। এই শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও প্রস্তুতির জন্য আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে উভয় দেশের মধ্যে এই বাণিজ্য সমঝোতা হয়।
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস