চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি কমেছে ৪৫%

চট্টগ্রাম বন্দরে গেট পাস ফি চারগুণ বৃদ্ধিতে পরিবহন ধর্মঘট চলমান

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি কমেছে ৪৫%

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে গেট পাস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহন কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে পরিবহন মালিকদের চলমান ধর্মঘটের কারণে গত চার দিনে কনটেইনার ডেলিভারি কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। ফলে বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক কনটেইনার জট—ডেলিভারির অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৩,৩০০ কনটেইনার।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) কোনো আলোচনা ছাড়াই ভারী যানবাহনের গেট পাস ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা নির্ধারণ করে, যা প্রায় ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি। এর প্রতিবাদে 'চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন' গত ১৫ অক্টোবর থেকে কনটেইনার পরিবহন কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ধর্মঘটের আগের দিন ১৪ অক্টোবর বন্দরের মাধ্যমে ৮,০৩৬টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মধ্যে ৩,৬৫২ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) ডেলিভারি করা হয়। অথচ ১৮ অক্টোবর এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২,০০৭ টিইইউতে।

বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) সমূহ কার্যক্রম চালু রাখলেও অধিকাংশ প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এতে করে বন্দরে কনটেইনার জট আরও তীব্রতর হয়েছে।

শনিবার চট্টগ্রামে 'পোর্ট ইউজার্স ফোরাম' আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “কোনো আলোচনা ছাড়াই গেট পাস ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করা হয়েছে। এটি শুধু অযৌক্তিক নয়, বরং অন্যায়। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি—বর্ধিত ফি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।”

ধর্মঘটের প্রভাবে আমদানিকারকদের প্রতিটি কনটেইনারের জন্য দৈনিক ২৪ থেকে ৯৬ ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত ‘স্টোরেজ চার্জ’ গুনতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমদানি নির্ভর শিল্প—বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতেও এর প্রভাব পড়ছে।

বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক বেলায়েত হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্প সময়নির্ভর। কাঁচামালবাহী একটি কনটেইনার একদিন দেরি হলে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধসহ অতিরিক্ত খরচে উৎপাদন চালাতে হয়। এতে সময় এবং অর্থ—দুই দিক থেকেই ক্ষতি হচ্ছে।”

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “মাত্র চার দিনের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি ৪৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এতে আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে, রপ্তানিও ব্যাহত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যে সমস্যা ১২ ঘণ্টায় সমাধান করা যেত, সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চার দিন লেগে গেছে। আন্তর্জাতিক মানের একটি বন্দর এভাবে চলতে পারে না।”

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রোববার সকালে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, “ধর্মঘটের কিছুটা প্রভাব পড়েছে, তবে তা বড় কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। বন্দরের বাড়তি হ্যান্ডলিং সক্ষমতা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়ক হয়েছে।”

সূত্র: টিবিএস

সিটিজিপোস্ট/জাউ

ক্যাটাগরি:
চট্টগ্রামঅর্থ-বাণিজ্য