চসিকে ঘষামাজায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি, দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত
দুদকের অভিযানে মিললো অনিয়মের প্রমাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

জালিয়াতির মাধ্যমে পৌরকর কমিয়ে রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ক্ষতি করার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগে এ অভিযান পরিচালনা করে দুদকের একটি টিম। অভিযানে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণে অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব সার্কেল-৮ এর বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই শেষে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের উপ-পরিচালক সায়েদ আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
কর নির্ধারণে অনিয়ম পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি হলো এছাক ব্রাদার্স, অন্যটি ইনকনট্রেড। এছাক ব্রাদার্সের প্রকৃত ভ্যালুয়েশন ছিল ২৬ কোটি টাকা, কিন্তু সেটিকে ঘষামাজা করে ৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। একইভাবে ইনকনট্রেডের ২৫ কোটি টাকার ভ্যালুয়েশন কমিয়ে ৫ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। ওই কমানো মূল্যের ওপর ভিত্তি করে পৌরকর নির্ধারণ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ফিল্ড বুক, ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট তালিকা, প্রকাশিত নথিপত্র এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছি। দেখা গেছে, রাজস্ব সার্কেলের কর কর্মকর্তা, উপকর কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগের কিছু কর্মচারী এতে সম্পৃক্ত। এটি স্পষ্টতই একটি ফৌজদারি অপরাধ।’
দুদক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা আজ সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। এসব ফাইন্ডিংস কমিশনকে জানানো হবে, এবং সেখান থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘কর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক উভয়েই এতে জড়িত। কারণ তারা সরাসরি সুবিধাভোগী। তাদের যোগসাজশের প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’
চসিক সূত্র জানায়, ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পৌরকর পাল্টে দেয়া হয় ঘষামাজা করে। প্রকৃত বার্ষিক মূল্যায়ন পরিবর্তন করে প্রতিটিতে ২০ কোটি টাকা করে পৌর কর কমানো হয়েছে মোট ৪০ কোটি টাকা। দুই হোল্ডিং মালিকের যোগসাজশে এ অনিয়ম করেছেন সংস্থাটির কয়েকজন কর–কর্মকর্তা ও উপ–কর কর্মকর্তা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তদন্তে কর নির্ধারণে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় বুধবার রাতে কর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপকর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অনিয়মে সহায়তার অভিযোগে তিন হিসাব সহকারী মঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সিটি করপোরেশনের সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের অভিযান শেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে তিনজন হিসাব সহকারী এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন, তারা জানিয়েছেন ডিটিও এবং টিও-এর নির্দেশেই তারা কাজটি করেছেন। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা কেন এমন কাজ করেছেন, তা এখনো তদন্তে বের হয়নি। মেয়র মহোদয় এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি কার্যক্রম যেন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলকভাবে সম্পন্ন হয়। দুদক তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছিল, সেটি ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।’
সিটিজিপোস্ট/এসএমএফ

.jpg&w=3840&q=75)

.png&w=3840&q=75)
.png&w=3840&q=75)