বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অক্টোবরেই সরকারের পতন ঘটবে।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘এই অক্টোবরেও আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো।’ অক্টোবর নিয়ে পাল্টাপার্টি ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে কি হতে যাচ্ছে এই অক্টোবরে।

প্রথমেই যদি কথা বলি তা হবে মার্কিন প্রভাব:

বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি নেই। একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং শর্ত আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অক্টোবরে বোঝা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত অবস্থান আরো স্পষ্ট হবে এই অক্টোবরে।

দ্বিতীয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা

বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ এবং জটিল অসুখে তিনি ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন এই কথাটাই কিন্তু সত্য। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। আজ রোববার এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী আজ ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে গেলে আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে বলেই তিনি দাবি করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে রাজনীতিতে নতুন পরিবর্তন দেখা দেবে। খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। বিএনপির আন্দোলন এর মাধ্যমে আরো বেগবান হতে পারে এমনটি কেউ কেউ মনে করছেন।

আবার অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়ার তেমন কিছু হলে খুব একটা বড় প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে না। তবে সরকার যদি শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে সরকারের জন্য তা ইতিবাচক হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। অক্টোবরে এই অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ ক্রমশ কমতে থাকা, ডলারের বাজারে হাহাকার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে দিশেহারা অবস্থায় নিয়ে গেছে। এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এই অক্টোবর মাসে বোঝা যাবে অর্থনীতিতে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং সেই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে কিনা।

আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা সবসময় থাকে। ভারত বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কিভাবে দেখতে চায়? বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কি তা পরিষ্কার হবে এই অক্টোবরে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অক্টোবর মাসেই সবকিছু নির্ধারিত হবে। কারণ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার কথা। তার আগেই যেকোনো একটি ঘটনা বা বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। কি হবে অক্টোবরে তা বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই।