শিক্ষার্থীদের দাবি চাকসু ও শতভাগ আবাসন, প্রশাসনের আগ্রহ ই-কারে
বর্তমানে চাকসু নির্বাচন নিয়ে সরব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে ডাকসু, রাকসু, জাকসু তফসিল ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনের ইশতেহার দিলেও চাকসু নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুখে কুলুপ এটে বসেছেন।
চালকের আসনে বসে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইয়াহিয়া আখতার শিক্ষার্থীদের কষ্টের বা দুঃখের কথা ভেবে ই-কার চালু করলেও পিতার আসনে বসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম চাকসু পুনরায় চালু করার কোনো প্রয়াসে নেই। শিক্ষার্থীদের চতুর্মুখী সমস্যার সমাধান 'চাকসু' নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যত সংকট কতটুক মোকাবেলা করতে পারবেন তিনি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যায়। যেখানে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ব্যাহত সেখানে ই-কার নিছক'ই উন্নয়নের চোখের বালি।
কিছুদিন আগে সিটিজিপোস্ট চাকসুর তফসিল ও গঠনতন্ত্র নিয়ে একটা ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করে। সেখানে চাকসুর তফসিল না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে। চবি শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ছিলো 'সবার আগে চবির ছাত্র সংসদ নির্বাচন'। চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটির তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও কেন এখনো চাকসুর তফসিল হলো না, এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবল ক্ষোভ।
শিক্ষার্থীরা চাকসুর দাবিতে অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয়ভাবে দাবি জানালেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি চাকসু দিতে না পারে সেটা হবে প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এতে প্রশ্ন থেকে যায় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কি শিক্ষার্থীদের নাকি প্রশাসনের?
চাকসুর দাবিতে সরব এমন সময় শিক্ষার্থীরা নামালো শতভাগ আবাসনের দাবিতে আন্দোলন। গত ১৮ আগস্ট শিক্ষার্থীরা শতভাগ আবাসনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দিলে উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহিয়া আখতার প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এতে স্পষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের সম্পর্ক ভালো নেই। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ।
শিক্ষার্থী আর প্রশাসনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের এমন অবস্থায় ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক শাটল( ই-কার) নামের এক ধরনের পরিবহনের যাত্রা শুরু হয়। গতকাল ১৯ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহিয়া আখতার এই গাড়ি চলাচলের উদ্বোধন করেন।
যদিও ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক শাটলের মতো একটা আধুনিক ও নান্দনিক বাহন চালু করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক আমেজ দেখা গেলেও গতকাল বৈদ্যুতিক শাটলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সে আমেজ ও উৎসাহ দেখা যায়নি। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে ই-কারের যাত্রা নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সেখানে অনেকে বলছে, চাকসু তফসিল ও শতভাগ আবাসন অথবা আবাসন ভাতা নিয়ে চলমান আন্দোলন আড়াল করার জন্য তড়িঘড়ি করে প্রশাসন ই-কার চালু করেছে। এছাড়া, ই-কারের ভাড়া নিয়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে।
এ সম্পর্কে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবির বিন জাবেদ বলেন,"চাকসুর আলাপ থেকে দূরে রাখতে এখন ই-কার আনছে যেটাও অপর্যাপ্ত। ই-কার এর ভাড়া নিয়েও শিক্ষার্থীরা খুশি না।"
এ সময়ে ই-কার সেবাকে হাসিনার উন্নয়নের সাথে তুলনা করে চবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জগলুল আহমেদ বলেন, "চবি প্রশাসন এই মুহূর্তে তাদের ক্ষমতায় তিলমাত্র বাধা চাইতেছেন না। চাকসু হলে এই ভিসি জবাব না দিয়ে পালিয়ে বাংলোতে যেতে পারতেন না, তাকে পদত্যাগপত্র দিয়ে ভার্সিটিই ছাড়তে হতো। এই বিষয়গুলো উনারা ভালো করেই বোঝেন। সে'জন্যই প্রশাসন চাকসু না দিয়ে ১৭ ঘন্টা কাজের বয়ান দেয়, মূলা হিসাবে সাদা রঙের ই-কার ঝুলায়। এগুলা হাসিনার 'উন্নয়ন উন্নয়ন' জিকিরের চবি ভার্সন স্রেফ, আর কিছু না।"
ই-কার যেন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য ব্যবহার না হয় সেটা উল্লেখ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম সুহৃদ বলেন, "আমরা মূলত চেয়েছিলাম চক্রাকারে বাস সার্ভিস। কিন্তু প্রশাসন দিলো ই-কার! যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ই-কার চালু করেছে, এটা অবশ্যই ব্যবসায়িক পারপাসে হওয়া উচিত নয়, বরং সেবামূলক হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে যেহেতু গ্যাসচালিত বাহনের তুলনায় বিদ্যুৎ চালিত বাহন অনেক সাশ্রয়ী, এবং মেইটেইনেন্স খরচও কম, সেহেতু ভাড়া অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত, কোনও ক্রমেই সিনএনজি ভাড়ার সমান হওয়া সমীচীন নয়। ভাড়া ৫ টাকা হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। যেহেতু সিট সংখ্যা তেরোটি। উল্লেখ্য, সিএনজি এবং রিকশার ক্ষেত্রে যেমন জমা টাকা রাখা লাগে, এবং এর মালিকানা যেমন প্রাইভেট, ই-কারের তেমন নয়। এক্ষেত্রে ভার্সিটিই ই-কারের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আয়তনের তুলনায় ই-কারের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল, এক্ষেত্রে সংখ্যা বৃদ্ধি করাই যুক্তিসংগত হবে বলে মনে করছি।"
ই-কারে ভাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম সম্পর্কে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন আরাফ বলেন, "শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করার কথা যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেখানে ব্যাতিক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিন্ডিকেট অটোরিকশা, সিএনজি, কটেজ ও হোটেল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রেখে শিক্ষার্থীদের ভোক্তা বানিয়ে মুনাফা লুটতে চান, এইজন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে আবাসন কিংবা চক্রাকার বাস চাওয়া হলেও মুনাফার লোভে ই-কার নামানো হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে ইকারের ভাড়া বর্তমান সিএনজি, রিক্সা ভাড়ার চেয়েও বেশি ক্ষেত্রবিশেষে।"
বর্তমান পরিস্থিতিতে ই-কার চালুকে ভাত না দিয়ে চকলেট দিয়ে বাচ্চা ভুলানোর সাথে তুলনা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনীম জাহান শ্রাবণ বলেন, "ঘরে ভাত নাই, বাচ্চা কান্না করতেছে। কান্না থামাইতে আপনি দিলেন বিদেশি চকলেট। এদিকে ভাতের কোনো ব্যবস্থা আর হইলো না! চাকসু, আবাসন ইত্যাদি সমস্যার আলাপ ঢাকতে ই-কারের মতো খুচরা আলাপ আনা আসলে ঐ কান্না থামাইতে বিদেশি চকলেট দেওয়ার মতোই।"
আরবি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে অভ্যুত্থানের একবছর পরও শিক্ষার্থীদের অবসান ও পরিবহন সংকট এবং একাডেমিক অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারেনি। প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব নীতির বিপরীতে নিজেদের মনগড়া কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীরা বারবারই তাদের ন্যায় অধিকার আদায় জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রশাসন দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। যেকারণে এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি হলো তাদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ে মধ্যে চাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রশাসন দায়িত্ব অবহেলার কারণে চাকসু দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।"
পার্সি ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী মুহিবুল্লাহ আল মসনূন বলেন, "এই প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা ছিল তারা তা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন তাদের সে ব্যর্থতা ঢাকার জন্য যা যা করার তা করছে। সম্প্রতি চালু করা ই-কার তাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার ঢাকার একটা অংশ হতে পারে। তিনি আরও বলেন আমরা মনে করেছিলাম, সিএনজি, রিক্সার যে ভাড়া সে তুলনায় ক্যাম্পাসে ই-কার আসলে ভালো হবে কিন্তু ই-কারের ভাড়া দেখে মনে সিএনজি, রিক্সায় ভালো ছিলো।"
চবি ক্যাম্পাস সুবিশাল। একটা অনুষদ থেকে আরেক অনুষদ, এক হল থেকে আরেক হলের যে দূরত্ব তা পায়ে হেঁটে যেতে বেশ সময়ের ব্যাপার। এছাড়া রিকশায় যেতে হলে অনেক টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্লাস শেষে শাটল ধরার তাড়াহুড়ো। সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক শাটল চবির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু এর চেয়ে জরুরী বিষয় আবাসন সংকটের সমাধান ও চাকসুর তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় চবির শিক্ষার্থীদের কাছে ই-কার একটা সান্ত্বনা পুরষ্কার মাত্র।
সিটিজি পোস্ট/ জেউ
২২ আগস্ট, ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ইসলামের বিজয়ের জন্য রুকনদের জান ও মাল দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের বানানো সব মতবাদকে পরাভূত করে আল্লাহর কালেমাকে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠা করাই হবে তাদের লক্ষ্য।শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানার ...
২১ আগস্ট, ২০২৫
২১ আগস্ট, ২০২৫
২১ আগস্ট, ২০২৫
২১ আগস্ট, ২০২৫
২১ আগস্ট, ২০২৫
২২ আগস্ট, ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ইসলামের বিজয়ের জন্য রুকনদের জান ও মাল দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের বানানো সব মতবাদকে পরাভূত করে আল্লাহর কালেমাকে সর্বোচ্চ স...