বিয়ের প্রলোভনে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে মহেশখালীর একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও খণ্ডকালীন শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজেই তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় এই মামলাটি দায়ের করেছেন।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, "অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে এবং দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই বড় মহেশখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির আজাদ জানান, "অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়।" তিনি আরও বলেন, "তারা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।"
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, "অভিযোগ শোনার পর অভিযুক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি কোচিং সেন্টারগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলে জানান।"
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার অভিযোগে জানায়, "হাবিবুর রহমান তার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পড়ালেখার ফাঁকে তিনি তাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ানোর এবং তার কোচিং সেন্টারে আসার প্রস্তাব দেন। শিক্ষকের জোরাজুরিতে সে কোচিং সেন্টারে যাওয়া শুরু করে। সেখানে বিশেষ ক্লাসের কথা বলে তাকে একা বসতে বলতেন এবং বিভিন্ন সময় তার শরীরের স্পর্শকাতর অংশে হাত দিতেন। এক পর্যায়ে হাবিবুর রহমান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং সেই প্রলোভনে কোচিং সেন্টারে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। কিন্তু পরে তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, "অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান তার 'মহেশখালী আইসিটি কেয়ার' নামের কোচিং সেন্টারে নারী শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলতেন। তিনি প্রথমে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন এবং কোচিংয়ের আড়ালে যৌন হয়রানি করতেন।"
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নারী সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা এনজিও সংস্থা 'ইপসা'র' ফোকাল পার্সন আজিজুল হক বলেন, "শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে পবিত্র সম্পর্ক ভেঙে এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি একটি আঘাত। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পাশে আছি।"
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহ বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো শিক্ষক বা কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেন।"
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস