মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম: রোগীদের ইনজেকশন ও ক্যানোলা লাগাচ্ছে আয়া-সুইপার
ক্যানোলা লাগাতে ২০ টাকা, ইনজেকশন ৩০ টাকা এবং জরুরি বিভাগের রোগীদের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়
মহেশখালী প্রতিনিধি | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ৭ অক্টোবর, ২০২৫

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরা বসে থাকলেও তাদের পরিবর্তে আয়া ও সুইপাররা রোগীদের হাতে ক্যানোলা লাগানো, ইনজেকশন দেওয়া ও স্যালাইন পুঁশ করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসাকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এসব কাজের বিনিময়ে রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
ভর্তি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, আয়া ও সুইপার হিসেবে কর্মরত কয়েকজন ব্যক্তি সরাসরি রোগীদের হাতে ক্যানোলা বসাচ্ছেন। কেউ কেউ স্যালাইন পুঁশ করছেন, আবার কেউ ইনজেকশন প্রস্তুত করছেন। এসময় দায়িত্বে থাকা নার্সদের অনেককেই ডিউটি রুমে নির্লিপ্তভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। আরও অবাক করা বিষয়—একজন যুবক কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ইনজেকশন প্রস্তুত করছিলেন।
স্থানীয় সাংবাদিক আ.ন.ম. হাসান জানান, “কয়েকদিন আগে আমার মেয়েকে ভর্তি করাই। সেখানে একজন বহিরাগত ছেলে ক্যানোলা দিয়েছে। পরে জানতে পারি, সে হাসপাতালের সুইপার।”
আরেক রোগীর স্বজন সরোয়ার বলেন, “আমার বাবাকে স্যালাইন পুঁশ করেছেন ১৮–১৯ বছরের এক ছেলে। পরে জানতে পারি, সে হাসপাতালের সুইপার।”
রোগীদের অভিযোগ, ক্যানোলা লাগাতে ২০ টাকা, ইনজেকশন দিতে ৩০ টাকা এবং জরুরি বিভাগের রোগীদের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে এসব সেবার জন্য টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
জানা গেছে, হাসপাতালের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে জনবল সংকটের অজুহাতে বহিরাগত কয়েকজনকে মাস্টাররোল বা মৌখিক চুক্তিতে আয়া, সুইপার ও পিয়ন হিসেবে কাজে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের দিয়েই ওয়ার্ডের ডিউটি করানো হচ্ছে। এমনকি নার্সরাই তাদের ইনজেকশন ও ক্যানোলা দেওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, ইনজেকশন ও ক্যানোলা ভুলভাবে প্রয়োগ করলে সংক্রমণ, রক্ত জমাট বাঁধা বা ওষুধজনিত প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে যা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই অশিক্ষিত আয়া–সুইপারদের হাতে এমন দায়িত্ব অর্পণ শুধু অনিয়ম নয়, এটি রোগীর জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুল হক বলেন, “হাসপাতালে নার্স ছাড়া কেউই ক্যানোলা, ইনজেকশন বা স্যালাইন পুঁশ করতে পারবে না। আমি এ বিষয়ে অবগত নই, তবে অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, “মহেশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া–সুইপার বা বহিরাগত কেউ যদি ইনজেকশন বা ক্যানোলা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি রোগীর জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।”
সিটিজিপোস্ট/ এসএইচএস


.jpg&w=3840&q=75)

