আপ বাংলাদেশের কর্মীদের দ্বারা অপহৃত ছাত্রলীগ নেতা অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ১১ নভেম্বর, ২০২৫

গত ৯ নভেম্বর রাতে ‘আপ বাংলাদেশ’ এর নেতাদের হাতে অপহৃত হওয়ার একদিন পর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা মো. ফয়সাল মাহমুদ ফাহাদকে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ ।
দেশব্যাপী চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের অংশ হিসেবে পাঁচলাইশ থানার অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল মাহমুদ (৩০)-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে নগরীর গোলপাহাড় মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পাঁচলাইশ মডেল থানার একটি টিম।
পুলিশ জানায়, ফয়সাল মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ফাহাদ’ নামের একটি আইডি ব্যবহার করে নিজেকে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মনোহরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার ফেসবুক আইডিতে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য, পোস্ট ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তিনি অনলাইনে “Mujibism Insights 71” ও “NextGen Mujib” নামের দুটি পেজের সাথে যুক্ত ছিলেন, যেখানে নিয়মিতভাবে উসকানিমূলক ও সরকারবিরোধী পোস্ট শেয়ার করা হতো।
এছাড়া, তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে “আমরা সবাই মুজিব সেনা ভয় করিনা বুলেট বোমা”, “৬৪ জেলা ইউনিট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন”, “Bangladesh Students League”, “মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ (অফিসিয়াল গ্রুপ)” ও “জয় বাংলা স্কোয়াড”সহ একাধিক গ্রুপে সক্রিয় থেকে নাশকতা উসকে দিচ্ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে রোববার (০৯ নভেম্বর) রাতে ছাত্রলীগেরে এ নেতাকে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেতর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভিকটিম ফয়সালের বাবা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ‘রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে ফয়সাল তার মাকে ডাক্তার দেখাতে পার্কভিউ হাসপাতালে যান। রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অবস্থানকালে মামলার ১ থেকে ৫ নম্বর আসামি এবং আরও চার থেকে পাঁচজন অজ্ঞাতব্যক্তি হঠাৎ তাকে ঘিরে ফেলে। তারা প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি, চড়থাপ্পড় মেরে টেনেহিঁচড়ে ফাহাদকে নিচে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।’
‘অপহরণকারীরা তাকে রাউজানের গহিরা এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবনে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে এবং ২০ লাখ টাকা দাবিতে ভয়ভীতি দেখায়। প্রথমে মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা নেওয়ার পর সোমবার সকালে তাকে বিভিন্ন এটিএম বুথে নিয়ে গিয়ে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে দুই ধাপে ৪০ হাজার টাকা তুলতে বাধ্য করে। মোট ৬০ হাজার টাকা নেওয়ার পর অপহরণকারীরা তাকে চকবাজার প্যারেড মাঠে ফেলে যায়।’
ফাহাদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশ তৎপরতা চালায়। পরে অপহরণকারীদের কয়েকজন ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে নাশকতা চেষ্টার অভিযোগ এনে সকালে পাঁচলাইশ থানার পুলিশের হাতে তুলে দিতে আসে। পুলিশ সবকিছু যাচাইয়ের পর অপহরণে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আরও অনেকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘ফয়সাল নামে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে পাঁচলাইশ থেকে তুলে নিয়ে রাউজান উপজেলার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আজকে (মঙ্গলবার) ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল মাহমুদ (৩০)-কেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’
জানা গেছে, গ্রেফতার ওই তিনজনের দুইজনই ‘আপ বাংলাদেশ’ চট্টগ্রামের কর্মী। তারা হলেন আপ বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহবায়ক আবুল আহাদ আশরাফুল, আবু তারেক মোহাম্মদ আসিফ এবং অন্যজন হলেন শাহাদাত হোসেন শান্ত। তারা সকলেই এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।
ঘটনার সত্যতা যাচাই ও পুলিশের প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অনৈতিক আচরণের কারণে আবুল আহাদ আশরাফুল ও আবু তারিক মোহাম্মদ আসিফ-কে আপ বাংলাদেশ থেকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আপ বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় যুগ্ম প্রধান সংগঠক ফায়াজ শাহেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক হুজ্জাতুল্লাহ আবীর ও সদস্য সচিব মাহী চৌধুরী।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘চট্টগ্রামে পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে থানায় সোপর্দ করার ঘটনায় কয়েকজনকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনা জানতে পেরে আপ বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর নেতৃবৃন্দ থানায় গিয়ে ঘটনার যেই বিবরণ শোনেন, তাতে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে থানায় সোপর্দ না করে বরং নিজেদের হেফাজতে রেখে তার ওপরে নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন সকালে তাকে থানায় সোপর্দ করতে গেলে আটককারীদেরকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় আটকদের সঙ্গে আপ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ আশরাফুল ও আবু তারেক মোহাম্মদ আসিফকেও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করা হয়।’
দলটি জানিয়েছে, সংগঠনের যে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যদি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তবে সংগঠন তার বিরুদ্ধে বিলম্ব ছাড়াই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম মো. ফয়সাল মাহমুদ ফাহাদ। গত বছর ছাত্রলীগের সম্মেলনে তিনি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে পুলিশ বলেছে, ওষুধ কোম্পানি হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যাল্সের সেলস্ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন ফয়সাল।
সিটিজিপোস্ট/জাউ



