ব্যাংকিং খাতে ইউনিয়ন ব্যাংকের রেকর্ড; এক বছরে লোকসান ২৬ হাজার কোটি টাকা

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

ব্যাংকিং খাতে ইউনিয়ন ব্যাংকের রেকর্ড; এক বছরে লোকসান ২৬ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ লোকসান রেকর্ড করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ২৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য বিপর্যয়ের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৪৮ টাকা ৯০ পয়সা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ২৯২ কোটি টাকা, শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৮২ পয়সা।

ব্যাংকিং খাতের অন্য বড় লোকসানদাতাদের মধ্যে রয়েছে জনতা ব্যাংক, যা ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এছাড়া এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান দিচ্ছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির তথ্য প্রকাশিত হয়। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের মোট খেলাপি ঋণের ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বড় অংশ চট্টগ্রামকেন্দ্রিক।

ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যার অর্ধেকই সাধারণ বিনিয়োগকারীর। বিপুল লোকসানের কারণে ব্যাংকের আর্থিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যার বড় অংশ এখন ঝুঁকির মুখে।

চট্টগ্রামের দোকানদার ইকবাল হোসেন চার বছর ধরে একটি ডিপিএস স্কিমে মাসে ২ হাজার টাকা করে জমিয়েছিলেন। গত জুনে স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে টাকা তুলতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। ব্যাংক জানায়, প্রতিদিন ১ হাজার টাকা তুলতে পারবেন, কিন্তু ১৩ দিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। একীভূত হওয়ার পর আমানতকারীরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউনিয়ন ব্যাংক ২০১৩ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০২০ সালে সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন। এর আগে তিনি ভাইস-চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংকে ফরেনসিক নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়। যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি পরিচালিত প্রতিবেদনে ইউনিয়ন ব্যাংকের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯৭.৮ শতাংশ।

পরে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংকসহ পাঁচটি দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এ প্রক্রিয়ার তদারকির জন্য একজন প্রশাসকও নিয়োগ করা হয়েছে। একীভূত করার জন্য নির্বাচিত ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। ডিএসইতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে; স্থগিত হওয়ার আগে শেয়ার প্রতি দাম ছিল ১ টাকা ৫০ পয়সা।

সিটিজিপোস্ট/জাউ

ক্যাটাগরি:
জাতীয়অর্থ-বাণিজ্য