রাজধানীর উত্তরায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় সারাদেশ যখন স্তব্ধ তখনই খানিকটা আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের ফুটবলাররা। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের অলিখিত ফাইনালে আজ সোমবার (২১ জুলাই) নেপালের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠ কিংস অ্যারেনায় সাগরিকার অনবদ্য পারফরম্যান্সে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। টানা ৬ জয়ে হয়েছে টুর্নামেন্টের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। এই টুর্নামেন্টে এটি বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় শিরোপা।
এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতির পর মাঠে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচ মিনিটে সাগরিকাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নেপালের। তিনটি আক্রমণ সাজান তিনি। দ্বিতীয়টি বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৫১ মিনিটে ভুল করেননি তিনি। উমহেলা মারমার পাস থেকে বল পেয়ে বডি ডজে দুজনকে ধোঁকা দেন সাগরিকা। সেখান থেকে বল টেনে নিয়ে সোজা জালে। দুই গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
এই নেপালের বিপক্ষেই লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন সাগরিকা। সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাগরিকা ফিরলেন দারুণভাবে। গোটা ম্যাচেই নেপালকে তটস্থ রেখেছিলেন এই ফরোয়ার্ড।
৫৮ মিনিটে জয়নব-সাগরিকা জুটি উন্মাতাল করে তোলে গ্যালারিকে। নিজেদের অর্ধ থেকে জয়নব বিবির দুরন্ত ভলিকে দ্বিগুণ সৌন্দর্যে জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সাগরিকা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় তিন গোলে।
৭১ মিনিটে সাগরিকা পেয়ে যান চতুর্থ গোল। নেপালের ডি-বক্সের ভেতর থেকে শিখার বাড়ানো ক্রসে মাথা ছোঁয়ান তিনি। রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে বাতিল হয় গোল। ৭৬ মিনিটে রেফারিকে আর সুযোগ দেননি সাগরিকা। মুনকি আক্তারের পাসে বল পেয়ে দ্রুত গতিতে ছিটকে ফেলেন নেপাল রক্ষণকে। পূর্ণ করেন নিজের হালি।
এর আগে প্রথম মিনিট থেকে আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৮ মিনিট পর্যন্ত। তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে একাদশে ফিরেছেন সাগরিকা। কেন তার অপেক্ষায় ছিল দল, তা বুঝিয়েছেন আবার। মাঝমাঠ থেকে স্বপ্না রাণীর বাড়ানো পাস পেয়ে ছুটতে দেরি করেননি সাগরিকা। একাই টেনে নেন বল, নেপাল গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে কাটালে সামনে কেবল জাল। সাগরিকা ভুল করেননি লক্ষ্যভেদ করতে।
এক গোলে এগিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় বাংলাদেশ। তবে, ১৯ মিনিটে বিপদে হতে পারত। গোল শোধের দারুণ সুযোগ পায় নেপাল। একবার বারপোস্ট আর পরপর দুবার বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিলি আক্তারের অসাধারণ সেইভ বঞ্চিত করে নেপালকে।
২০ মিনিটে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে স্বপ্নার ক্রসে ফাঁকায় বল পান মুনকি আক্তার। শেষ মুহূর্তে নেপাল ডিফেন্ডার আনিশা রয় ক্লিয়ার করেন।
প্রথমার্ধের বাকিটা সময় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দুদলই চেষ্টা করেছে গোল পেতে। বাংলাদেশকে একাধিকবার বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক মিলি। সাগরিকা-মুনকিরা নেপালের রক্ষণকে কাঁপিয়ে ব্যবধান বাড়ানোর দ্বারপ্রান্তে গেলেও গোলের দেখা মেলেনি।
আগের পাঁচ আসরে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট ২০২১ থেকে নিয়মিত হচ্ছে। প্রথমবার নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জেতে আঁখি-স্বপ্নারা। দুই বছর পরও শ্রেষ্ঠত্বটা ধরে রাখে বাংলাদেশ। তৃতীয় আসরে বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে রাখে ভারত। এরপর ২০২৩ সালে আবার নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। গতবার ঢাকায় হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে শিরোপা জিতেছিল। মোট ছয় আসরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ডাবল লিগ পদ্ধতিতে শিরোপা ফয়সালা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্ট সমান ৯ হয়, এরপর মুখোমুখি ফল, গোলপার্থক্য এবং গোল স্কোরও সমান হওয়ায় টুর্নামেন্টের গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারতকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
১১ দিনের প্রতিযোগিতায় ছয় ম্যাচের ছয়টিই জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল মেয়েরা। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারে নেপাল। এরপর টানা দুবার ভুটানকে হারায় স্বাগতিকেরা। লঙ্কানদের সঙ্গে দ্বিতীয় দেখায় বাংলাদেশ জেতে ৫-০ গোলে।
সিটিজিপোস্ট/এসএমএফ