জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাসিনা রায় ঘোষণা করা হবে ১৭ নভেম্বর
নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যূত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড হবে। তবে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি মামুনের বিষয়ে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ বা বানচাল করতে আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু বিচার তার নিজস্ব গতিতেই এগোচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলাটি দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রথম শুনানিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। প্রসিকিউশন মামলাটিতে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয় এবং ১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।
বিচার চলাকালে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেয়।
গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরবর্তীতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেয়া হবে, তা আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ:
প্রথম অভিযোগ: গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের পর তার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এতে দেড় হাজারের বেশি নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন আন্দোলনকারীদের দমন করতে। তার এই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে কার্যকর হয়। এই নির্দেশের অডিও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়।
তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জন নিরীহ আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার দায়েও তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় ছয়জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করবে।
সিটিজিপোস্ট/জাউ




