গভীর রাতে এক ফেসবুক পোস্টে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (দক্ষিণাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, যা ভারতের মদদে পরিচালিত হচ্ছে। তার এই পোস্ট রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, গত ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্টের এক বৈঠকে তাকে এবং আরও দুইজনকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে তাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন বণ্টনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য সমঝোতায় আসতে। তিনি দাবি করেন, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে এবং শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সম্মত হয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে একটি নতুন সংগঠন তৈরি করা, যেখানে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং তাপস রায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের সামনে রাখা হবে। তাদেরকে এপ্রিল-মে মাস থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করতে হবে, শেখ হাসিনাকে অস্বীকার করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, তিনি এবং তার সহযোগীরা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের যুক্তি ছিল, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিবর্তে দলটির বিচার হওয়া উচিত। তবে ক্যান্টনমেন্টের প্রতিনিধিরা তাদেরকে সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী লীগকে ফিরতে বাধা দিলে দেশে সংকট সৃষ্টি হবে এবং এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। এমনকি তাদেরকে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।
হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বৈঠকের এক পর্যায়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যে দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, তাদেরকে কিভাবে ক্ষমা করা যায়?’ উত্তরে ক্যান্টনমেন্টের প্রতিনিধিরা রেগে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা কিছুই জানো না। আমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা আছে। আমরা অন্তত চল্লিশ বছর ধরে এই কাজ করছি। তোমার বয়সের চেয়েও বেশি। আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন সম্ভব নয়।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর জবাব ছিল কঠোর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’
পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও তাদেরকে বিভিন্ন চাপ দেওয়া হয়েছিল। কখনো এজেন্সি, কখনো ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা প্রেসক্রিপশন মেনে নেওয়ার চাপ তৈরি করা হয়েছিল। তবে তিনি দাবি করেন, তারা সেই চাপে নতি স্বীকার করেননি এবং জনগণের সমর্থনে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টের শেষে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, সকল যদি-কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর এই পোস্ট দেওয়ার পর তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি জানান, নানামুখী চাপ এবং বিপদের মুখোমুখি হতে হতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোষ করার সুযোগ নেই বলেও তিনি জোর দিয়েছেন।
এই পোস্টের মাধ্যমে হাসনাত আব্দুল্লাহ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের সূচনা করেছেন। তার অভিযোগ কতটা সত্য, এবং ক্যান্টনমেন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পোস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এবং এর প্রভাব ব্যাপক হতে পারে।