চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নিয়োগ বাণিজ্যে মধ্যস্থতার নামে হস্তক্ষেপ ও চেক আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চবি ছাত্রদল কর্মী আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে।
চবির আরবী বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মো. এমরান হোসেন চাকরি দেওয়ার নামে সাবিনা ইয়াসমিনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন। আর এই টাকা উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে চেক আত্মসাৎ করেন চবি ছাত্রদল কর্মী আহসান হাবিব।
জানা যায়, আহসান হাবিব চবি ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের অনুসারী।
সাবিনা ইয়াসমিনের অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতারের সময়কালে ১৫ জনকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে মোট ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এমরান। কিন্তু উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে টাকার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ভুক্তভোগী ইয়াসমিন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সাবিনা ইয়াসমিন সিটিজি পোস্টকে জানান, আহসান হাবিব নিজেকে ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিয়ে টাকা উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সেই প্রতিশ্রুতিতেই আমি তাকে ইমরানের দেওয়া ১৫ লাখ ও তিন লাখ টাকার দুটি চেক দেই। তবে টাকা উদ্ধার করতে না পারায় চেক ফেরত চাইলে হাবিব সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন এবং ১৫ লাখ টাকার চেক ফেরত দিলেও ৩ লাখ টাকার চেক ফেরত দেননি। বরং ওই চেক ফেরত দেবেন না বলে জানান হাবিব।
ভুক্তভোগী ইয়াসমিন আরো জানান, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি হাটহাজারীর হোটেল জামানে দেখা করার কথা বলে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও ৩০-৪০ জন কর্মী। তারা আমাকে ১৫ লাখ টাকা গ্রহণে চাপ প্রয়োগ করেন এবং তার পাওনা টাকা তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
এ ব্যাপারে ইয়াসমিন সিটিজি পোস্টকে বলেন, হাবিব জানান- আমার পাওনা টাকা তিন ভাগ হবে- এক ভাগ আমি, বাকি দুই ভাগ অন্যদের। আমি রাজি হইনি।
তিনি আরো বলেন, প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করায় যেন আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এখন আমায় বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি। যেকোনো মুহূর্তে আমার পরিবারের উপর হামলা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আহসান হাবিবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ব্যস্ততার অজুহাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
তবে চবি ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন সিটিজি পোস্টকে বলেন, এই ঘটনা সর্ম্পকে আমি অবগত আছি। ভুক্তভোগী নারী প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেছে। হাবিবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “অভিযোগটা আমরা পেয়েছি। বোর্ড অব হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারির সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।”
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ইয়াসমিন ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী এমরানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে এমরানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে মূল অর্থ উদ্ধার এবং বিচার প্রক্রিয়া এখনও অনিশ্চিত।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস