তরুণীকে ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগ

রাঙামাটিতে রেস্টুরেন্ট মালিক সালাউদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

রাঙামাটি প্রতিনিধি | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

তরুণীকে ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগ

রাঙামাটিতে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও তার নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন (৪৫)কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে রাঙামাটির চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে কোতয়ালী থানা পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোতয়ালী থানার পক্ষ থেকে আসামির রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, যার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মধ্যরাতে দায়ের করা মামলার এজাহারে ভিকটিম নারী উল্লেখ করেন, তিনি রাঙামাটি শহরের একটি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর্মরত। বিবাদী সালাহ উদ্দিন (৪০), পিতা মৃত এ.কে.এম খায়ের উদ্দিন ও মাতা নিলুফা বেগম। তার স্থায়ী ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার খাগাতুয়া গ্রাম, আর বর্তমান ঠিকানা রাঙামাটি শহরের উত্তর কালিন্দীপুর এলাকায় অবস্থিত মায়ের দোয়া নার্সারি ও কসমস হোটেল অ্যান্ড রুফটপ রেস্টুরেন্টের মালিক হিসেবে পরিচিত।

এজাহারে বলা হয়, সালাহ উদ্দিন তরুণীকে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে গাউছিয়া মার্কেটের নিচতলায় ইসলামী ব্যাংকের পাশে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সে জানায়, এটি তার অফিস কক্ষ। তরুণী রুমে প্রবেশের পর ডিসি অফিসের কর্মকর্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন দরজা বন্ধ করে তাকে বসতে বলে। কিছুক্ষণ পর সে তরুণীর বোরকা খুলে ফেলার চেষ্টা করে এবং বাধা দিলে চুল ধরে ফেলে দেয়, কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সালাহ উদ্দিন তার কাছে থাকা পিস্তল ও ছুরি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং তরুণীর জামা-কাপড় খুলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর নিজের মোবাইল ফোনে ভিকটিমের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে তরুণীর মোবাইল ফোন ও এনআইডি কার্ডের ছবি নিয়ে তাকে কক্ষে আটকে রেখে চলে যায়। দুই ঘণ্টা পর সে ফিরে এসে আবারও হুমকি দিয়ে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে।

ঘটনার পরপরই তরুণী কোতয়ালী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন জানান, ভিকটিমকে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সালাহ উদ্দিনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩, ২০২০ ও ২০২৫) এর ৯(১) ধারা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(১)/৮(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৩৪২/৩২৩/৫০৬ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটি কোতয়ালী থানায় ৩১ অক্টোবর তারিখে নথিভুক্ত হয় (মামলা নং-০৯)।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। বিস্তারিত জানতে চূড়ান্ত মেডিকেল রিপোর্ট ও ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে, পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিনকে এর আগেও এক কলেজ শিক্ষার্থীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। ওই ঘটনায়ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছিলো।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকজন তরুণীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া, চাকরি দিয়ে বেতন কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ থানায় রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনেক তরুণী তার দ্বারা হেনস্তার শিকার হলেও সামাজিক লজ্জার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ করেননি।

সিটিজিপোস্ট/এমএইচডি

ক্যাটাগরি:
পার্বত্য চট্টগ্রাম