রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু ও পাইলটসহ এ পর্যন্ত ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৭১ জন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর হতাহতদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হতাহতের একটি তালিকা দেয় আইএসপিআর।
সে অনুযায়ী, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা: আহত- ৮, নিহত নেই; বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত- ৭০, নিহত: ২; সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা: আহত- ১৭, নিহত- ১২, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল: আহত- ১, নিহত- ২; লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরা: আহত- ১১, নিহত- ২, উত্তরা আধুনিক হসপিটাল: আহত- ৬০, নিহত- ১; উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত- ১, নিহত নেই; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: আহত- ৩, নিহত-১।
এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ১৯ জন নিহতের কথা জানিয়েছিলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের একটি সূত্র আজ বিকেলে জানায়, এ পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে। তারা হলো- নাফিস (৯), শামীম (১৪), সায়েম ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান ফায়াজ ও সামিয়া। এর মধ্যে নাফিসের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
এছাড়াও আহত নওরিন (৯) ৩০ শতাংশ, মাসুমা (৯) ৬০ শতাংশ, তাসনিয়া ৩৫ শতাংশ, অয়ন (১৪) ৬০ শতাংশ, মাহতাব (১৩) ৮০ শতাংশ, মাকিন (১৫) ৬২ শতাংশ, আরিয়ান (১১) ৫৫ শতাংশ, আরিয়ান (১৫) ১০০ শতাংশ, রোহান (১৯) ৫০ শতাংশ, মেহরিন ১০০ শতাংশ, নাজিয়া (১৩) ৮০ শতাংশ, চান মিয়া (৪০) ৪০ শতাংশ, আবির ২০ শতাংশ, মাসুম (৩২) ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
আজ দুপুর ১টার পর স্কুল ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। পরে বিধ্বস্ত হয়। নিহত পাইলটের নাম তৌকির ইসলাম সাগর।
আজ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, 'রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫০ জনের বেশি। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিচয় এখনো আমরা জানতে পারিনি। এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি। আমরা আরও খোঁজখবর নিচ্ছি।'
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমানটি আজ বেলা ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস জানায়, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বেলা ১টা ১৮ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। খবর পেয়ে ১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর, পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
এছাড়াও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকজন আহত শিক্ষার্থীকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। উদ্ধার কাজে যোগ দেয় দুই প্লাটুন বিজিবি।