চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার পাহাড় এলাকায় তিনমাস পর আবারও দেখা মিলেছে বন্য হাতির। সম্প্রতি কোরিয়ান ইপিজেড এলাকার সড়ক পার হওয়ার সময় ১টি হাতি দেখতে পায় স্থানীয়রা। এতে নতুন করে আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আনোয়ারা কেইপিজেড পাহাড় থেকে তিনটি হাতি তাদের স্থানে ফিরিয়ে নিয়েছে। বনবিভাগ হতে পূনরায় হাতি না ফিরতে সকল ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তিন মাস না যেতে একটি হাতি আনোয়ারায় ফিরে আসায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে আনোয়ারার বৈরাগ দেয়াং বাজার হয়ে কোরিয়ান ইপিজেড ও কর্ণফুলীর শাহমীরপুর সংলগ্ন এলাকায় একটি বন্য হাতি ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এ সময় হাতিটি বিভিন্ন ফলবাগান, ফসলি জমিতে ক্ষয়ক্ষতি করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, আনোয়ারাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে গত শনিবার রাত একটার দিকে হাজিগাঁও এলাকায় পাহাড়ে লেজকাটা হাতিটি দেখতে পান স্থানীয়রা। আবারও আমাদের ঘুম হারাম করে দিল বন্য হাতি। রোববার রাত দশটার দিকে গুয়াপঞ্চক এলাকায় লেজ কাটা হাতিটিকে আমরা দেখতে পেয়েছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বাঁশখালী (জলদি) রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘হাতি চলাচলের বিষয়ে আমরা ভোরেই অবগত হয়েছি। আপাতত একটি হাতির উপস্থিতির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মানুষের প্রাণহানি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে হাতি দেখতে গিয়ে বা উৎসুক জনতার কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও জানান, ‘আমাদের ৫টি ইআরটি (ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম) কাজ করছে। যদি কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোরিয়ান ইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি এখনো বিষয়টি নিশ্চিত নই। আমাদের এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে ভালোভাবে জানবে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
বন বিভাগ সূত্র জানায়, পাহাড়ে খাদ্য সংকট ও বনভূমি দখলের কারণে বন্য হাতির দল লোকালয়ে চলে আসছে। এ সমস্যা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত এক দশকে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বন্য হাতির আক্রমণে কমপক্ষে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে শাহমীরপুর এলাকায় একটি শিশুর মৃত্যু হলে দুই উপজেলার মানুষ তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের মুখে বন বিভাগ ও কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তখন ইআরটি সদস্যদের মাধ্যমে একটি হাতিকে বাঁশখালীর গহিন পাহাড়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, এবং অন্য দুটি হাতি স্বাভাবিকভাবে ফিরে যায় বলে জানানো হয়েছিল।