গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন
মাঠ প্রশাসনকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। জানানো হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ ৩১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রধানেরা অংশ নেন।
ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করা হলে ভোটকেন্দ্র ও কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়বে। এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আর পৃথক দিনে আয়োজন করা হলে উভয় নির্বাচনের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠ প্রশাসনকে হেলিপ্যাড সংস্কার ও মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় এবং প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়েও একজন চিকিৎসক ও একজন নার্সসহ ক্লাস্টারভিত্তিক মেডিকেল টিম থাকবে।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখা, ভোটগ্রহণের ফুটেজ সংরক্ষণ এবং অনিয়ম শনাক্তে তা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, সেগুলোর যাতায়াতের রাস্তা সংস্কার ও মেরামতেরও নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি, ঋণখেলাপিদের তালিকা হালনাগাদ, ভোটের দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও কারাবন্দিদের পোস্টাল ব্যালট সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
সিইসি নাসির উদ্দিন সচিবদের উদ্দেশে বলেন, “গণভোট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে নাকি পৃথক দিনে হবে, তা সরকার নির্ধারণ করবে। তবে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “আমরা খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছি। আপনারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। একদিনে দুটি ভোট হলে কেন্দ্র ও কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়বে—এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।”
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, “গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে সরকার। আমরা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষার সময়সূচি নির্বাচনের সঙ্গে সমন্বয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা থাকবেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করার অনুরোধ জানানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিভির নেতৃত্বে ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনার কথাও জানায় ইসি।
এছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ভ্রান্ত তথ্য প্রতিরোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি মনিটরিং সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আখতার আহমেদ বলেন, “ইসি পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য একটি ট্রায়াল অ্যাপ তৈরি করেছে, যা আগামী ১৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে যেন নির্বাচন ও গণভোট দুটোই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়।”
সিটিজিপোস্ট/জাউ




