পোর্ট কানেকটিং প্রকল্পে ২৪ কোটির কেলেঙ্কারি
চসিকের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিনসহ চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ২১ অক্টোবর, ২০২৫
_(48).jpg&w=3840&q=75)
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পোর্ট কানেকটিং রোড উন্নয়ন প্রকল্পে কোটি টাকার জালিয়াতি, চেক ইস্যুতে অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চসিকের সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে চার অভিযুক্তের নাম হলো- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (৫৫), মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন (৫৪), ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখার তৎকালীন এফভিপি ও হেড অব ব্রাঞ্চ মো. সরোয়ার আলম (৪৩), এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, কুমিল্লা শাখার এভিপি ও শাখা প্রধান মোহাম্মদ তোফায়েল।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, “আলংকার থেকে নিমতলা পর্যন্ত পোর্ট কানেকটিং রোড উন্নয়ন (বিসি দ্বারা)” প্রকল্পের অধীনে কাজ পায় মেসার্স রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহম্মদ (জেভি)।
প্রকল্প কার্যাদেশের স্মারক অনুসারে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের বিলের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৭২ টাকা ৯৯ পয়সা। এই অর্থ ঋণদাতা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল), কুমিল্লা শাখার নামে পরিশোধের কথা থাকলেও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়ম ভঙ্গ করে সরাসরি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন শর্ত ভঙ্গ করে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ব্যাংকের পরিবর্তে সরাসরি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে ছয়টি চেক ইস্যু করে প্রায় ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ১৮২ টাকা উত্তোলন করা হয়। এতে প্রকল্পের আর্থিক স্বচ্ছতা ভঙ্গ হয় এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের পথ প্রশস্ত হয়।
দুদকের তদন্তে আরও উঠে আসে, অভিযুক্তরা প্রতারণা, জালিয়াতি ও জাল নথি ব্যবহার করে ২৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে সরকারি তহবিল থেকে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৪ হাজার টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হক প্রথমে মামলাটি দায়ের করেন (মামলা নং-৩২)। পরে আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে দুদক পরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদ ২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নতুন করে চার্জশিট দাখিল করেন।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের ও অন্যদের আর্থিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশ্যে চসিকের পোর্ট কানেকটিং রোড প্রকল্পের ক্ষতিসাধন করেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রকৃত ঠিকাদার নিজে কাজ না করে অবৈধভাবে আমমোক্তার নিয়োগ দেন এবং কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অপরকে প্রদান করেন। কাজটি শেষ না করায় জনভোগান্তি সৃষ্টি হয় এবং সরকারি ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতিও হয়।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মো. জাকির হোসেন প্রকল্পের ঠিকাদার মোহাম্মদ আলম কর্তৃক অবৈধভাবে আমমোক্তার নিযুক্ত হন। তিনি মিথ্যাভাবে নিজেকে রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহম্মেদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে উপস্থাপন করে ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। এ সময় তিনি রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহম্মেদ নামে একটি হিসাব ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ নামে লোন হিসাব খুলে ওই অর্থ উত্তোলন করেন।
দুদক কর্তৃপক্ষ জানায়, মামলাটি তদন্ত করে এর আগে একবার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পুনঃতদন্ত শেষে চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
দুদকের দাবি, এই চেক জালিয়াতির মাধ্যমে শুধু সরকারি অর্থ নয়, জনস্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস

.jpg&w=3840&q=75)

.png&w=3840&q=75)
.png&w=3840&q=75)