জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ ও সম্মতির জন্য গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে গণভোটটি কবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রবিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চতুর্থ দিনের বৈঠকে এই ঐকমত্য গড়ে ওঠে। আলোচনার পর কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, “গণভোটের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। এটি জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ।”

তিনি বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে নতুন আইনসভা গঠিত হবে, সেই সংসদ জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে টেকসই সংস্কার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে এ বিষয়েও কার্যত ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।’’

অধ্যাপক রীয়াজ আরও জানান, ‘‘কমিশন আশা করছে খুব শিগগিরই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিতে পারবে। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব এলেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মনে করছে, সনদ বাস্তবায়নে তা জরুরি নয়।’’

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আজকের আলোচনায় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিএনপি প্রস্তাব করেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট আয়োজন করা হোক।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই গণভোটের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হওয়া সংবিধানের ১৪২ ধারা হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে পুনর্বহাল হয়েছে এবং তা এখন কার্যকর। এই ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আগে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অনুমোদন নেওয়া যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছি, সেই ধারায় আরও দুটি ধারা যুক্ত করা হোক, যা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সংসদ নির্বাচনের দিনে দ্বিতীয় ব্যালটে জনগণের রায় নেওয়া যেতে পারে।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট আয়োজন করতে হবে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “গণভোটের বিষয়ে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল একমত। তবে আমরা চাই, এটি নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হোক।”

তিনি বলেন, “জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত নয়। জাতীয় নির্বাচনকে জটিল না করে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে, তফসিল ঘোষণার আগেই এটি আয়োজন করা যেতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোনো বাধা থাকবে না।”

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “গণভোট হলে এটি চ্যালেঞ্জ করলেও টিকবে না। পার্লামেন্টও তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। ফলাফল আমাদের বিপক্ষে গেলেও আমরা তা মেনে নেব।”

তিনি আরও জানান, ‘‘গণভোট আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে।’’

সিটিজিপোস্ট/ এসএইচএস