রাউজানে প্রধান শিক্ষিকার অবসরে রাজকীয় ও আবেগঘন বিদায়ী সংবর্ধনা

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

রাউজানে প্রধান শিক্ষিকার অবসরে রাজকীয় ও আবেগঘন বিদায়ী সংবর্ধনা

চট্টগ্রামের রাউজানে প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে দেখা গেল বিরল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আবেগ। অবসর গ্রহণ উপলক্ষে প্রিয় প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহারকে দেওয়া হলো রাজকীয় ও স্মরণীয় বিদায়। রাউজানের ঊনসত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন সম্মানজনক আয়োজন আগে দেখা যায়নি।

রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয় মাঠে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নিজাম উদ্দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহেদুল ইসলাম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. রাসেল, রাজুসহ আরও অনেকে। বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

রাজকীয় আয়োজনের অংশ হিসেবে সাবেক শিক্ষার্থীরা ফুলে সজ্জিত গাড়িতে জান্নাতুন নাহারকে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। চারদিকে ফুলের বৃষ্টি, স্লোগানে মুখর পরিবেশ—সব মিলিয়ে বিদ্যালয়জুড়ে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন দৃশ্য। মঞ্চে তাঁকে প্রদান করা হয় ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা।

সহকর্মী শিক্ষকদের বক্তব্যে উঠে আসে তাঁর সময়নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার কথা। তারা বলেন, “ম্যাডামের শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি শুধু বিদ্যালয় নয়, আমাদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন। ভবিষ্যতে যেখানে দায়িত্বই পালন করি না কেন, তাঁর পথ অনুসরণ করব।”

২০০৮ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জান্নাতুন নাহার। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ সালে একক সেরা শিক্ষক হিসেবে মালয়েশিয়া সফরের সুযোগ পান। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুটবল, অংক দৌড়সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিকবার সাফল্য অর্জন করে।

বিদায় অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে কান্না ধরে রাখতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীও। একজন সৎ, মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের বিদায়ে আবেগে ভেসে যায় পুরো অনুষ্ঠান স্থল।

রাউজানবাসীর এমন ভালোবাসা ও রাজকীয় সংবর্ধনা আবারও প্রমাণ করল—
একজন ভালো শিক্ষক শুধু বিদ্যালয় নয়, মানুষের হৃদয়েও চিরস্থায়ী হয়ে থাকেন।

সিটিজিপোস্ট/জাউ

ক্যাটাগরি:
জাতীয়