চট্টগ্রামসহ দেশের ৪১% আইসিইউ রোগী অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছে না: আইইডিসিআর
অনলাইন ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ভয়াবহ হারে বাড়ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশ কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই সাড়া দিচ্ছে না।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) আইইডিসিআর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ন্যাশনাল এএমআর সার্ভেলেন্স রিপোর্ট ২০২৫’ প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রফেসর ড. জাকির হোসেন হাবিব।
আইইডিসিআরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৯৬,৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশের পাঁচটি আইসিইউতে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে—অনেক অ্যান্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা নেই।
প্রতিবেদনের প্রধান কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর) জীবাণু
– সব নমুনায়: ৭%
– আইসিইউতে: ৪১%
মাল্টি-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর) জীবাণু
– সব নমুনায়: ৪৬%
– আইসিইউতে: ৮৯%
WHO Watch-Group অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার
– আগের বছর: ৭৭%
– এবার বেড়ে: ৯০.৯%
ঢাকায় ৫৭% অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের মোট অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ৫৭ শতাংশই ঢাকায়। এর কারণ:
ঢাকায় রোগীর চাপ বেশি
বিশেষায়িত হাসপাতাল সংখ্যা বেশি
স্বাস্থ্যসেবায় সহজ প্রবেশাধিকার
এরপর সর্বোচ্চ ব্যবহার দেখা গেছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১০ অ্যান্টিবায়োটিক
সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজোল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম এবং ভ্যানকোমাইসিন—এই দশটি ওষুধই সর্বোচ্চ ব্যবহৃত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ভবিষ্যতে চিকিৎসাকে অকার্যকর করে দিতে পারে এবং জটিলতা বাড়াতে পারে।
আইইডিসিআরের পরিচালক ড. শিরিন বলেন, “প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না।”
তিনি আরও জানান, ‘‘দেশের অনেক মানুষ দোকানের কর্মী বা অবৈধ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খান, যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের অন্যতম প্রধান কারণ।’’
দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা যে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সার্ভেলেন্স রিপোর্টটি তা স্পষ্ট করেছে। বিশেষজ্ঞসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই কঠোর নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল চিকিৎসা সেবার বিকল্প নেই।
সূত্র: টিবিএস




