পঞ্চদশ সংশোধনীর হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আপিল

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ৩ নভেম্বর, ২০২৫

পঞ্চদশ সংশোধনীর হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আপিল

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) রিটকারী সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া এই আপিল দায়ের করেন। আপিলে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয়কে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেন আদালত। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল করা হয়নি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, “গণতন্ত্র আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এই গণতন্ত্র বিকশিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আত্মবিশ্বাস জনগণের মধ্যে জন্ম নেয়নি, যার ফলশ্রুতিতে হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।”

হাইকোর্ট আরও বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছে।”

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেন।

তবে আদালত স্পষ্ট করেন, “পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোপুরি বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলো আগামী জাতীয় সংসদ আইন অনুযায়ী জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।”

এর মধ্যে জাতির পিতার স্বীকৃতি, ২৬ মার্চের ভাষণসহ কিছু বিষয় রয়েছে।

গণভোট প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, “গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছিল, যা সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হলো।”

এ রায়ে ৭(ক), ৭(খ) এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদও বাতিল করা হয়েছে। ৭(ক) অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ হিসেবে উল্লেখ ছিল। ৭(খ) অনুচ্ছেদে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছিল। আর ৪৪(২) অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার বিষয়ে হাইকোর্ট ছাড়া অন্য আদালতের ক্ষমতা দেওয়ার বিধান ছিল, যা আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও আইনগত বিতর্ক চলে আসছে।

ক্যাটাগরি:
জাতীয়