পদ্মা অয়েলে নিয়োগ পরিক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ৩ নভেম্বর, ২০২৫

পদ্মা অয়েল কোম্পানি পিএলসি’র কর্মচারী নিয়োগ পরিক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লিখিত পরীক্ষার নির্ধারিত সময়সীমা দেড় ঘণ্টা হলেও খাতা তুলে নেওয়া হয় মাত্র ৪৫ মিনিটে। আবার একইদিন পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশের ফটোকপি দোকানগুলোতে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ও উত্তর বিক্রি হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের দাবি, দোকানে পাওয়া প্রশ্নের সাথে হলে বিতরণ করা প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল।
চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পদ্মা অয়েলের এভিয়েশন বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর, মেকানিক এবং এটেনডেন্ট (ফুয়েলিং) পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষার্থীরা জানান, এডমিট কার্ডে সময়সীমা উল্লেখ ছিল দুপুর ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। তবে সময়সীমা কমিয়ে মাত্র ৪৫ মিনিটেই পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেওয়া হয় এবং বিষয়টি আগে থেকে জানানোও হয়নি।
লিখিত পরীক্ষার ফল ঘোষণায় দেখা যায়, কম্পিউটার অপারেটর পদে ১৭ জন, মেকানিক পদে ১৬ জন এবং এটেনডেন্ট (ফুয়েলিং) পদে ২২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপর ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে মোট ১৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
অনেক পরীক্ষার্থী প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুলে বলেন, ফটোকপি দোকানে মোটা অংকের বিনিময়ে প্রশ্ন বিক্রয় হয়েছে।
সাজু নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, “৪-৫ ঘণ্টায় ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্নে এমসিকিউ ছিল না, তবুও এত দ্রুত স্ক্রুটিনি কীভাবে সম্ভব? ফলাফল আগেই ঠিক করা ছিল এবং যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তারা আগে থেকেই নির্ধারিত।”
জাকির হোসেন সাংবাদিক নামে একটি আইডিতে নিয়োগ পরিক্ষায় অনিয়ম নিয়ে একটি পোস্ট করা হলে এতে আবু মোহাম্মদ নোমান নামের একজন মন্তব্য করে বলেন, “আমার ক্যান্ডিডেট সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর করেছে। কিন্তু রোল নেই। মেধাবীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এই রেজাল্ট বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া উচিত।”
আরেকজন পরীক্ষার্থী তাহমিদুল ইসলাম জানান, “পরীক্ষার আগেই দোকানে প্রশ্ন বিক্রি হয়েছে। আমার পরিচিত একজনের সব কমন পড়েছিল, ভালো পরীক্ষা দিয়েছে, তবুও ফেল।”
বঞ্চিত পরীক্ষার্থীদের দাবি, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
তাদের অভিযোগ, টাকা দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষা ছিল শুধুই প্রহসন।
অভিযোগে উঠে এসেছে, নিয়োগ কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে বড় অংকের লেনদেন হয়েছে এবং পরীক্ষার ফলাফল আগেই ঠিক করা ছিল। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমানের নামও উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে জানতে পদ্মা অয়েল পিএলসি’র মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. জিয়াউল হাসান এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) ও সদস্য সচিব মীর মোহাম্মদ ফখর উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি। এছাড়াও মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
একইভাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ও মনিটরিং-২ শাখার উপসচিব মো. আহসান উদ্দিন মুরাদকেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
জিয়াউল হাসান স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, ফল ঘোষণার পরদিন থেকেই ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, যা চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষার স্থান নির্ধারণ করা হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েলের প্রধান স্থাপনা এবং ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
পরীক্ষার্থীদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করে সঠিকভাবে পুনরায় পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে, নয়তো নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস




