বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ‘কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে’ সমঝোতার পথে অগ্রসর হতে। ঈদুল আজহার দিন (৭ জুন) ফিরোজায় অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি এই বার্তা দেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনের এক হোটেলে তারেক রহমান ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে শুধু নির্বাচন নয়, দেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা, সুশাসন ও অর্থনৈতিক রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বেগম জিয়া প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। এক সদস্য বলেন, “ম্যাডাম চেয়েছেন যেন কোনো অপ্রয়োজনীয় দূরত্ব বা দ্বন্দ্ব তৈরি না হয়। তিনি সমঝোতার বার্তা দিয়েছেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অবস্থান এক। এখানে কোনও বিরোধ নেই।”

সোমবার (৯ জুন) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমান সদস্যদের কাছে মতামত জানতে চান। সূত্র মতে, কেউ বৈঠকের বিরোধিতা করেননি। বৈঠকে তাকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ গ্রহণের পক্ষে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন জানানো হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার গুলশানে সাংবাদিকদের জানান, “১৩ তারিখ লন্ডন সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। আমরা আশা করি, এই মিটিং রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”

ফখরুল আরও বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক একটি বড় ইভেন্ট। যদি সবকিছু সঠিকভাবে চলে, তাহলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।”

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, বৈঠকে কারা কারা অংশ নেবেন বা এটি একান্ত সাক্ষাৎ (one-to-one) হবে কিনা—এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসেনি।

বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান বলেছেন, “সরকারের সঙ্গে আমাদের যে দূরত্ব, তা সহনীয় পর্যায়ে আসতেই হবে। রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আলোচনা দরকার।”

বিএনপি মনে করছে, দেশের রাজনৈতিক স্বার্থ ও জনগণের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আলোচনায় আশাব্যঞ্জক বার্তা উঠে আসবে।

এই বৈঠকের দিকে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলও নজর রাখছে। ১৩ জুনের বৈঠক আদৌ কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ধারণ করবে দেশের আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথ।