ইসরাইলের রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে শাস পার্টির জোট ত্যাগ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোট সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক দল, অতি-অর্থডক্স ইহুদি শাস পার্টি বুধবার (১৬ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার মাধ্যমে নেতানিয়াহুর সরকার সংসদে তার প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে সরকার এখন কার্যত একটি সংখ্যালঘু অবস্থানে পৌঁছেছে, যা সরকারের ভবিষ্যত আইন প্রণয়ন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলবে।
বিরোধের কেন্দ্রে সামরিক সেবা
শাস পার্টির জোট ত্যাগের মূল কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি বিতর্কিত ইস্যু—সকল ইসরায়েলি নাগরিকের জন্য আবশ্যিক সামরিক সেবা। বর্তমানে ইসরাইলে পুরুষদের জন্য প্রায় তিন বছর এবং নারীদের জন্য দুই বছর সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক। তবে দেশটির অতি-অর্থডক্স হারেড়ি সম্প্রদায় বহুদিন ধরেই এই বাধ্যবাধকতার বিরোধিতা করে আসছে।
তাদের দাবি, ধর্মীয় শিক্ষা ও সাধনার জন্য তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেন না, এবং এই ইস্যুতে তারা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতির সুযোগ পেয়ে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই অব্যাহতি বাতিলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এর প্রেক্ষিতেই সরকারে থাকা অতি-অর্থডক্স দলগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
জোটে আরও ফাটল, আরও সংকট
শুধু শাস পার্টিই নয়, এ সপ্তাহের শুরুতে আরেকটি অতি-অর্থডক্স দল—ইউনাইটেড তোরা জুডাইজম (ইউটিজে)—জোট সরকার থেকে পদত্যাগ করে। ফলে নেতানিয়াহুর সরকার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে।
যদিও শাস পার্টি জানিয়েছে, তারা সরকার পতনের চেষ্টা করবে না এবং কিছু নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে ভোটে সহমত হতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সরকার এখন কার্যত একা। সংসদে কোনো বিল পাশ করানো কিংবা বাজেট অনুমোদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এই দুর্বল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
নেতানিয়াহুর জন্য বড় রাজনৈতিক ধাক্কা
বিগত বছরগুলোতে নানা ঘূর্ণাবর্তের মধ্য দিয়ে ইসরাইলের রাজনীতি এগিয়েছে। বারবার নির্বাচন, জোট ভাঙন ও অস্থিরতা যেন দেশটির রাজনীতির নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি নেতানিয়াহু একাধিকবার সরকার গঠন করেন, কখনো ডানপন্থীদের সঙ্গে, আবার কখনো মধ্যপন্থী দলগুলোর সহায়তায়।
তবে বর্তমান জোটটি ছিল মূলত ডানপন্থী ও কট্টর ধর্মীয় দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এই জোট থেকেই একে একে শরিক দলগুলোর সরে যাওয়া নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের ওপর জনগণের আস্থার সংকটকেই স্পষ্ট করছে।
এগিয়ে কী অপেক্ষা করছে?
শাস পার্টির ঘোষণায় আপাতত সরকার পতনের সম্ভাবনা না থাকলেও, ইসরাইলের রাজনীতি যে আরও অস্থিরতার দিকে এগোচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দিনে নেতানিয়াহুর সরকারকে একদিকে কট্টর ডানপন্থী জোট শরিকদের দাবি মেটাতে হবে, অন্যদিকে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সমঝোতার রাজনীতিও করতে হবে—যা এক জটিল সমীকরণ।
সবচেয়ে বড় কথা, সামরিক সেবা ইস্যুতে কোনো স্থায়ী সমাধান না এলে, অতি-অর্থডক্স সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের সংঘাত আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
শাস পার্টির জোটত্যাগ ইসরাইলি রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে নেতানিয়াহু এখন এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছেন। রাজনৈতিক চাপ, জনঅসন্তোষ ও জোট সংকট—সব মিলিয়ে সামনে যে সময়টি তার সরকারের জন্য কঠিন হতে চলেছে, তা বলাই যায়।