সৌদি আরব এবং পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান একে অপরের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে দুই দেশের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার হলো। এই চুক্তি এমন সময়ে সই হল যখন মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা উত্তেজনা বেড়ে চলেছে।
উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নিরাপত্তা নির্ভরতা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর এ উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা বলেন, “এই চুক্তি বহু বছরের আলোচনার ফলাফল। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।”
গত সপ্তাহে দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনায় আরব দেশগুলো ক্ষুব্ধ হয়। সে সময় কাতার যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতা করছিল।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্বাক্ষরিত এ চুক্তি অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের মিত্র হিসেবে পরিচিত উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চাইছিল। তবে গাজা যুদ্ধ পুরো অঞ্চলের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। কাতার এক বছরের মধ্যে একবার ইরান এবং একবার ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে।
সৌদি কর্মকর্তা আরও বলেন, "পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতও একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, তাই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।" তিনি জানান, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। আমরা এ সম্পর্ক আরও বাড়াতে চাই এবং আঞ্চলিক শান্তিতে অবদান রাখতে চাই।”
চুক্তির আওতায় পাকিস্তান কি সৌদি আরবকে পারমাণবিক সুরক্ষা দেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা সামরিক সহায়তার সব দিককেই অন্তর্ভুক্ত করে।”
পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সম্প্রচারে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান চুক্তি স্বাক্ষরের পর একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনির, যিনি দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, “এই চুক্তি দুই দেশের যৌথ অঙ্গীকারের প্রতিফলন, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াবে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য হবে।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
সিটিজিপোস্ট/ এসএইচএস