খাগড়াছড়ি জেলার ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী এক পাহাড়ি স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের 'আবদুল খালেক' মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
ঢাকা থেকে আগত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধি দল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়। সংগঠনের সভাপতি নীতি চাকমা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
বক্তব্যে বলা হয়, "গত ২৭ জুন রথযাত্রা শেষে বাড়ি ফেরার পথে আত্মীয়ের বাসায় রাত্রিযাপনের সময় সন্ধ্যায় ৬ জন সেটেলার বাঙালি (যারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত)৷ ভাইবোনছড়া বাজারের উন্নয়ন বোর্ডের পাশে একটি বাসায় ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। ভয়ে এবং সামাজিক লজ্জায় ভিকটিম বিষয়টি প্রথমে পরিবারকে না জানালেও, ১২ জুলাই বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ১৬ জুলাই সে পরিবারের কাছে ধর্ষণের কথা জানায়, এবং পরে তার বাবা খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।"
মামলার পর পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করলেও, বাকি দুই আসামিকে এখনো ধরতে পারেনি। এছাড়া পুলিশ এখনও ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহে কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যা প্রশাসনের গাফিলতিরই প্রমাণ।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, "ঘটনাটি জানাজানি হলে ১৭ জুলাই স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে নামে। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইউপিডিএফ, বাসদ (মার্কসবাদী), সিপিবি প্রমুখ দল বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানায়।
একইদিন “সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ”-এর ব্যানারে ভাইবোনছড়ায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলায় সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা, গ্রামবাসী জগৎ শান্তি চাকমা, মুক্তি বাবু ত্রিপুরা, সুনয়ন ত্রিপুরা, শিবা ত্রিপুরা ও সৌরভ ত্রিপুরাসহ অনেকে আহত হন। সেনারা সাংবাদিকের ছবি মুছে ফেলতে বাধ্য করে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, "একটি কুচক্রী মহল ও একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এমনকি ত্রিপুরা জাতিগত সংগঠনের নামে সাজানো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আসামিদের রক্ষা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।"
বক্তব্য শেষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও নৃবিজ্ঞানী নাসরিন সিরাজ বলেন, “ভিকটিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা জানতে পারি, ঘটনার এতদিন পরেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়নি। এটি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং বিচারহীনতারই অংশ।”
সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. খাগড়াছড়িতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং ধর্ষকদের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক সাজা কার্যকর করতে হবে।
২. সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার স্কুল ছাত্রীর চিকিৎসার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তাসহ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩.পাহাড়-সমতলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টের ওপর সরকারী বিশেষ সংস্থার গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
৫. পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার করতে হবে।
উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নীতি চাকমা (সভাপতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন), নাসরিন সিরাজ (সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), তানিয়াহ মাহমুদা তিন্নী (শিক্ষক), ব্যারিস্টার মিমি মেহনাজ (মানবাধিকার আইনজীবী), মারজিয়া প্রভা ও ফেরদৌস আরা রুমী (গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি), ড. সুরাইয়া ইয়াসমিন পলি (ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ), অমল ত্রিপুরা (পিসিপি), স্কাইয়া ইসলাম (গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল), রিপা মজুমদার (নারী মুক্তি কেন্দ্র), সীমা ত্রিপুরা (ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম), ও ছাত্র প্রতিনিধি কৃপায়ন ত্রিপুরা।
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস