ভারত নির্ভরতা কমলেও বিকল্প উৎসে স্থিতিশীল পেঁয়াজ বাজার

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৩/৭/২০২৫, ৫:৪০:২৯ PM

ভারত নির্ভরতা কমলেও বিকল্প উৎসে স্থিতিশীল পেঁয়াজ বাজার

দেশে পেঁয়াজের বাজারে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে অভাবনীয় স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আগে যেখানে অমৌসুম ও ভারতীয় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা দেখা যেত, সেখানে এখন দেশীয় উৎপাদন, বিকল্প উৎস থেকে আমদানি এবং সরকারের কার্যকর উদ্যোগে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৩০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক কম এবং স্থিতিশীল।


কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতার পেছনে সরকারি মনিটরিং, মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আমদানির উৎস বৈচিত্র্যকরণ প্রধান কারণ। এছাড়া বিগত মৌসুমে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা নিজেরাই উৎপাদন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, সর্বশেষ মৌসুমে পেঁয়াজের বাড়তি উৎপাদন হয়েছে কারণ কৃষকরা ভালো দাম পেয়েছেন। এছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতার পেছনে সরকার নির্ধারিত বাজার মনিটরিং এবং ব্যবসায়ীদের মজুদদারি কমে যাওয়ার ভূমিকা রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি দাম উৎপাদন খরচের নিচে নেমে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে উৎপাদন কমে গিয়ে আবার অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এজন্য চাষ নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সরকারি দপ্তরগুলোকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।

বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩০-৩২ লাখ টন। গেলো মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৩৯ লাখ টন। যদিও উৎপাদনের ৩০ শতাংশ পঁচে যাওয়ায় সরবরাহযোগ্য পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৭ লাখ টনে। অতীতে প্রতিবছর ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও এবার উৎপাদন ও মজুদ বাড়ায় আমদানি অনেক কমেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ পঁচে যাওয়ার বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংরক্ষণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রচার ও বাস্তবায়নে একটি কুলিং প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে উৎপাদন হার ও সরবরাহ দুটোই বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এই প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবদুর রহমান মন্ডল বলেন, উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে পেঁয়াজের দামের স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ পঁচে যাওয়ায় উৎপাদিত পরিমাণ চাহিদা পূরণে যথেষ্ট না হলেও নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, গেলো বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত ছাড়া আটটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৭ শতাংশ এসেছে পাকিস্তান থেকে। বাকি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসর, মিয়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড।

ভারতীয় বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎসে আমদানি বাড়ানোয় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা হয়নি, এমনকি রমজান ও কোরবানির ঈদের মতো চাহিদাসম্পন্ন সময়েও বাজার ছিল স্থিতিশীল।

গেলো বছর নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সাধারণত দেশীয় উৎপাদন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এবং নতুন মৌসুমের আগে অমৌসুমকালে সরবরাহ সংকট দেখা দিলে দাম বাড়ে। রবি শস্য মৌসুম ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ায় অক্টোবর-নভেম্বরে বাজার চূড়ায় পৌঁছায়। তবে এবার মৌসুম শেষে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, যা একটি বড় অর্জন বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

সব মিলিয়ে সরকারি তত্ত্বাবধান, বিকল্প উৎসে আমদানি, দেশীয় উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন পেঁয়াজের বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়েছে। তবে এ সাফল্য ধরে রাখতে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংকট এড়াতে পরিকল্পিত উৎপাদন, মজুদ ব্যবস্থাপনা ও বাজার নজরদারির ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিটিজি পোস্ট/এইচএস

ক্যাটাগরি:
অর্থ-বাণিজ্য

অর্থ-বাণিজ্য ক্যাটাগরি থেকে আরো