ভারতীয় ভিসা সংকটে চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশিরা

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৪/৭/২০২৫, ৬:২৫:২০ PM

ভারতীয় ভিসা সংকটে চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশিরা

ঢাকা থেকে মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টার ফ্লাইট দূরত্বে অবস্থিত চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং এখন বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে। ভারতীয় ভিসা জটিলতা ও সীমিত সুযোগের কারণে অনেক বাংলাদেশি রোগী এখন চিকিৎসার জন্য চীনকে বেছে নিচ্ছেন।


উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চমানের চিকিৎসাসেবা এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী খরচের কারণে ক্যান্সার, হৃদরোগ, নিউরোসার্জারি ও জটিল অপারেশনের ক্ষেত্রে কুনমিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চিকিৎসা পর্যটন সংস্থা ট্র্যাক মেডি সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী ড. মো. রাশেদুল হাসান বলেন, "চীনে চিকিৎসা খরচ থাইল্যান্ড ও ভারতের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই কম, আবার প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সুবিধা অত্যন্ত উন্নত।" তিনি জানান, চীনের হাসপাতালগুলোতে রয়েছে আধুনিক রোবোটিক সার্জারি, ক্যান্সার থেরাপি ও স্পেশালিস্ট সেন্টার, যা বাংলাদেশিদের জন্য খুবই সহায়ক।

বাংলাদেশি রোগীদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত আরিফিন ইসলাম বলেন, "চিকিৎসা শুরু করতে ১০,০০০ ইউয়ান (প্রায় ১.৭৫ লাখ টাকা) ডিপোজিট দিতে হয়। চিকিৎসা শেষে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। এখানে চিকিৎসা সেবার মান বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় ভালো।"

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের ফি মাত্র ১৫ ইউয়ান (প্রায় ২৬০ টাকা)। এমনকি স্পাইন সার্জারির মতো জটিল অপারেশন এবং হাসপাতালে ১০ দিন থাকা মিলিয়ে খরচ হয় গড়ে ১০,০০০ ইউয়ানের মধ্যে।

তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাষা। দোভাষীর সংকট ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বোধ না থাকা রোগীদের চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে সিরিয়াল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে রোগীদের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।

মেডিকেল ট্যুর অপারেটর সিওক হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী এম এম মাসুমুজ্জামান বলেন, “ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, সিরিয়াল, খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থা উন্নত না হলে চীনের চিকিৎসা বাংলাদেশের রোগীদের কাছে জনপ্রিয় হতে সময় লাগবে।”

চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে একটি রোগী প্রতিনিধি দল কুনমিং সফর করে। এতে ৩১ সদস্যের ওই দলে ছিলেন রোগী, চিকিৎসক, ট্যুর অপারেটর ও সাংবাদিকরা।

বর্তমানে ঢাকা-ভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যেমন সিওক হেলথকেয়ার এবং ট্র্যাক মেডি সার্ভিসেস চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী পাঠানোর কাজ করছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

কুনমিংয়ের যেসব সরকারি ও আধা-সরকারি হাসপাতাল ইতোমধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স

  • দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি

  • ফুওয়াই ইউনান হসপিটাল অব দ্য চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেস

  • ইউনান ট্রাডিশনাল চাইনিজ মেডিকেল হসপিটাল

বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, “ভাষা ও সমন্বয়ের কিছু সমস্যা থাকলেও ভবিষ্যতে কুনমিং বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।”

তিনি জানান, চীনের হাসপাতালগুলোর সার্ভিস সেন্টার ঢাকায় স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে বাংলাদেশ থেকেই চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা প্রতিবছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় করেন। এর বড় অংশ যায় ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। তবে ভারতীয় ভিসা কড়াকড়ির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশিরা চীনের কুনমিং, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।



সিটিজিপোস্ট/আরকে

ক্যাটাগরি:
জাতীয়

জাতীয় ক্যাটাগরি থেকে আরো

যদি কেউ মব তৈরি করতে চায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

যদি কেউ মব তৈরি করতে চায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৪ জুলাই, ২০২৫

মব ভায়োলেন্স বা গণপিটুনির মত ঘটনাকে ‘কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এসব বন্ধ করতে হলে জনগণকে সরব হতে হবে। তিনি বলেন, “যখন জনগণ সরব হবে, তখনই মব ভায়োলেন্স বন্ধ হবে।”...