বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে ডেমু ট্রেন প্রকল্প এখন এক লজ্জাজনক ব্যর্থতার নাম, যেখানে উন্নয়নের নামে হয়েছে দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা আর বিপুল অর্থের অপচয়। যা আজ রেলওয়ে দুর্দশার সবচেয়ে বড় উদাহরণে পরিণত হয়েছে। যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীন থেকে কেনা হাজার কোটি টাকার ট্রেনগুলো এখন পরিণত হয়েছে ভাঙ্গারির টুকরোয়। মাত্র পাঁচ বছর ব্যবহারের পর অকেজো হয়ে যাওয়া এসব ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের নামে সরকার আরো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও তাতে ছিল না কোনো বাস্তব সুফল।
২০১৩ সালে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছিল ২০ সেট আধুনিক ‘ডেমু’ ট্রেন। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ২৫-৩০ বছর স্থায়িত্বের আশ্বাস দিলেও মাত্র পাঁচ বছরেই ট্রেনগুলো হারায় তার কার্যক্ষমতা। এছাড়াও ২০১৯ সাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ডেমু ট্রেনের সব ধরনের যাত্রী পরিবহন সেবা।
এদিকে ডেমু ট্রেনের চলাচল বাস্তবে বন্ধ থাকলেও থেমে থাকেনি এই ট্রেন নিয়ে দুর্নীতি, বাজেট ব্যয় ও অর্থের অপচয়- অথচ যাত্রীরা পাননি কোনো ধরণের সেবা।
রেলওয়ের এক অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডেমু ট্রেন মেরামতের নামে ব্যয় করা হয় ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ কিনতে খরচ হয় আরও ২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪১ টাকা। এই দুই অর্থবছরে ডেমু ট্রেন মেরামতে রেল মোট ব্যয় করেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৭৮১ টাকা- যা বর্তমানে সম্পূর্ণ অপচয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
জানা যায়, রেলের এমন কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কার্যালয় থেকে।
এমন অনিয়ম শুধু ডেমু ট্রেনের ক্ষেত্রেই নয়, রেলের প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই এখন অনিয়ম, ব্যর্থতা ও লোকসান স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’, ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ও ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রেও ঠিক একই চিত্র চোখে পড়ে। এই সবগুলোই এখন লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হওয়ার পথে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ব্যর্থতার মূল কারণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অপরিকল্পিত বিনিয়োগ ও ব্যক্তি স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত।
রেলওয়ে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটিজি পোস্টকে বলেন, দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে সেবার মান বাড়ানো তো দূরের কথা, বরং পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে ।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ, লাইনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ, কোচগুলো জরাজীর্ণ। এর মধ্যেই চলছে যাত্রী পরিবহন। গতি বাড়েনি, কমেনি দুর্ভোগ বরং বিপুল অর্থ ব্যয়ে চলা উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও ব্যর্থতা।
রেল সূত্রে জানা যায়, গত এক যুগে রেল খাতে বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার অধিক। তবে এতো অর্থ ব্যয় করেও রেল বাড়াতে পারেনি তাদের যাত্রীসেবার মান, বরং প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
ডেমু ট্রেন নিয়ে রেলওয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তা জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদককে এর সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। বরং রেলওয়ের অতিঃ মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এদিকে অতিঃ মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রেলওয়ের এমন দূরাবস্থা ও অনিয়ম সম্পর্কে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সিটিজি পোস্টকে বলেন, রেল প্রথম থেকেই দুর্নীতিতে ভরা, আমরা রেলের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূল করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসিয়েছি। রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে তৈরি করতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তবে ডেমু ট্রেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, কি আর করার- ভাঙ্গারির দরে বেচা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকের কাছেই রাষ্ট্রীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। নানা চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতায় রেলখাতের কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিয়মিত রেলওয়ের সেবা গ্রহণকারী এক যাত্রী সিটিজি পোস্টকে বলেন, এটি এখন আর শুধু যাত্রী পরিবহনের একটি মাধ্যম নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রশাসনিক জটিলতার একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
২৬ জুলাই, ২০২৫
নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও, নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত একটি ছয় সদস্যের কমিটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়।গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ ঘোষণা করায় ভবিষ্যতে আর কোনো প্রধানমন্ত্রী সেখানে থাকতে পারবেন না। তাই ব...
২৬ জুলাই, ২০২৫
২৫ জুলাই, ২০২৫
২৫ জুলাই, ২০২৫
২৫ জুলাই, ২০২৫
২৫ জুলাই, ২০২৫
২৬ জুলাই, ২০২৫
নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও, নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত একটি ছয় সদস্যের কমিটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়।গণভবনকে ‘জুলাই ...