আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির জলাশয় দখল
আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও রেলওয়ের নির্দেশনা অমান্য করে রেলের সম্পত্তি ও ভূমি দখলে রাখাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে এস এ কর্পোরেশন, সিলভার জুবিলী লিমিটেড সহ নানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহ আলমের।
চট্টগ্রাম নতুন রেল স্টেশনের কারপার্কিং থেকে শুরু করে নগরীর হালিশহর এলাকায় অবস্থিত রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির (আরটিএ) জলাশয় ও পরিত্যক্ত কোয়ার্টার দখল- সব কিছুতেই যেন শাহ আলমের প্রভাব। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও রেলওয়ের নির্দেশনা অমান্য করে সরকারি সম্পত্তি ভোগ ও দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
রেল সূত্রে জানা যায়, মাছ চাষের কথা বলে ২০১৫ সালের ২৫ মে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির আওতাধীন ২৫.৯৭ একরের একটি জলাশয় পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নেন সিলভার জুবিলী লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহ আলম। তবে মাছচাষ না করে ওই জলাশয় থেকে হাজার হাজার ঘন ফুট বালু উত্তোলন ও জলাশয়ের আশপাশের জায়গা ভরাট করে নিজের জন্য একটি বাংলো বাড়ি তৈরি করে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করায় সিলভার জুবিলী লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এর প্রেক্ষিতে, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আরটিএ’র পরিত্যক্ত বাংলো নং-০৯, জলাশয়, বাগান ও সন্নিহিত ভূমি থেকে সিলভার জুবিলী লিমিটেডকে উচ্ছেদ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন 'ডিইও' চট্টগ্রামের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৩.৫০ একর রেলভূমি উদ্ধার করা হয়। পরে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ওই এলাকা তারকাটা বেড়া ও দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এরপর উচ্চ আদালতে একটি রিট (পিটিশন নং ৪০১২/১৯) দায়ের করেন সিলভার জুবিলী লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম।
রেলওয়ের তৎকালীন আইন কর্মকর্তা মো. সালাহ্ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠির প্রেক্ষিতে জানা যায়, আদালত সিলভার জুবিলী লিমিটেডকে ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিলেও ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট শাহ আলম আবারো মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে রেলওয়ের পক্ষে বাদীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
তবে আইন-আদালত কিংবা রেলওয়ের নির্দেশনা- কোনো কিছুই পাত্তা দেননি শাহ আলম।
রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ এক তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও উচ্ছেদের পর অল্প সময়ের মধ্যেই শাহ আলম তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহীনি আরএনবির কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ওই জলাশয় পুনরায় দখলে নেন। আজও সেখানে রয়েছে তার অটুট বলয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিজ পাওয়ার পরপরই নিয়ম ভেঙে তিনি হাজার হাজার ঘণফুট বালু তুলে জলাশয়ের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র ধ্বংস করেন। এরপর সেই জায়গা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নির্মাণ করেন বিলাসবহুল একটি বাংলো বাড়ি। সরকারি সম্পত্তিকে বেসরকারি আবাসনে পরিণত করা শাহ আলমের কাছে কোনো বড় বিষয় নয়, কথিত আছে তার ‘অদৃশ্য শক্তি’ রেলের অভ্যন্তরে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শাহ আলমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস কারও নেই। রেলের মধ্যেই রয়েছে তার নিজস্ব ‘লবিং নেটওয়ার্ক’। কথিত আছে, তিনি রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বদলিতেও নিয়ন্ত্রণ রাখেন।
একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শাহ আলম শুধু ঠিকাদার না, রেলের ভেতরে এক অঘোষিত সম্রাট। সে চাইলেই কর্মকর্তার পদোন্নতি বা বদলি ঠেকিয়ে দিতে পারে। এমন প্রভাবশালী দখলদারকে কেউ ছুঁতেও পারে না।”
উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আবার দখলে নেওয়ার ঘটনাকে রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি ‘প্রশাসনিক পরাজয়’। তাদের ভাষায়, “রেল উচ্ছেদ করে, শাহ আলম আবার দখল করে- এটাই এখন বাস্তবতা।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহ আলম রেলের কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে কারও বদলি রোধ, কারও পদোন্নতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব নেটওয়ার্ক। ফলে রেলের ভেতরে অনেকেই তাকে “স্বঘোষিত মাফিয়া” বলে আখ্যা দেন।
রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বলেন, ওই জলাশয় ও কোয়ার্টার পুনর্দখল হওয়ার পর রেলের পক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। উচ্ছেদের পর প্রশাসনিক টিম কয়েকবার গেলেও পরবর্তীতে সবকিছু থেমে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে রেল সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন- রেলের সরকারি সম্পত্তি দখলদারের হাতে ছেড়ে দিলে আইনের মর্যাদা কোথায় দাঁড়ায়? শাহ আলমের মতো প্রভাবশালীরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?
এ বিষয়ে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর এস এম সলিমুল্লা বাহার সিটিজি পোস্টকে বলেন, আমি এখানে এসেছি খুব বেশিদিন হয়নি, তবে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির (আরটিএ) জলাশয় ও পরিত্যক্ত কোয়ার্টার লীজ ও দখল এবং আদালতে রিট পিটিশন সম্পর্কে শুনেছি। এ ব্যাপারে আইন কর্মকর্তার সাথে আমার কথাও হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলা চলমান আছে বলেও জানান রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর এস এম সলিমুল্লা বাহার।
এদিকে রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধ ভাবে ভোগ ও দখলে রাখার বিষয়টিকে অস্বীকার করে সিলভার জুবিলী লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আদালত তার পক্ষে স্টে অর্ডার দিয়েছেন।
তবে তিনি দেশের বাইরে আছেন অজুহাতে এ সংক্রান্ত কোন নথি উপস্থাপন করতে পারেননি।
মামলা চলমান আছে জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বঞ্চালের আইন কর্মকর্তা আল মাহমুদ সিটিজি পোস্টকে বলেন, মামলাটি শুনানীর জন্য কজ-লিস্টের শেষের দিকে রয়েছে।
আল মাহমুদ আরও জানান, সচিব ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটনী জেনারেল কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে জরুরী ভিত্তিতে মামলার শুনানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
রেলওয়ের সম্পত্তি দখলের একের পর এক অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, শাহ আলমের মতো দখলদারদের বিরুদ্ধে রেল যদি কঠোর অবস্থান না নেয়, তবে সরকারি সম্পত্তি বাঁচানো কঠিন হবে। আদালতের আদেশ অমান্য করে দখল বজায় রাখা শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জও বটে।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস
৯ অক্টোবর, ২০২৫
আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ওই দিন বেলা ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জা...
৯ অক্টোবর, ২০২৫
৯ অক্টোবর, ২০২৫
৯ অক্টোবর, ২০২৫
৯ অক্টোবর, ২০২৫
৯ অক্টোবর, ২০২৫
আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ওই দিন বেলা ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধি...