তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ঐকমত্য, তবে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগে দ্বিমত—দুই ফর্মুলা প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

সিটিজি পোস্ট প্রতিবেদক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১২/৭/২০২৫, ১২:০৬:২৮ PM

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ঐকমত্য, তবে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগে দ্বিমত—দুই ফর্মুলা প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে একমত হয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগপদ্ধতি ও সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের কাঠামো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংলাপ চলছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে।


ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, দুইটি ফর্মুলার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়েছে। উভয় প্রস্তাবেই সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের সদস্যদের ভোটে কিংবা সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে বিএনপি এখনো কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান জানায়নি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পৃথক পৃথক পদ্ধতি প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে।

২০১০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দিলেও সেই রায়ে পর্যবেক্ষণ ছিল, পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার এ ব্যবস্থা বাতিল করে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়—তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এখন ত্রয়োদশ সংশোধনীর বাতিল-সংক্রান্ত মামলার রিভিউ শুনানি বিচারাধীন।

সাত সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও উচ্চকক্ষের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে। সব দল প্রধান উপদেষ্টার জন্য নাম প্রস্তাব করবে। প্রস্তাবিত তালিকা থেকে নাম বাছাই ও শুনানির পর, উচ্চকক্ষের সদস্যরা র‌্যাঙ্ক চয়েজ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে একজনকে নির্বাচিত করবেন। রাষ্ট্রপতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে শপথ পাঠ করাবেন।


সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে। একমত না হলে, উচ্চকক্ষের ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় একমত হলেও এখনো নির্দিষ্ট গঠন কাঠামোতে সায় দেয়নি। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা অন্যান্য দলের প্রস্তাব দেখার অপেক্ষায় আছেন এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে তাদের অবস্থান। তবে বিএনপি মনে করে বিচার বিভাগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক কাঠামোর বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত।


দলটি আগের তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো পুনর্বহাল চাইলেও এখন নতুন প্রস্তাব দিতে আগ্রহী। তারা রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে রাখার কোনো সুযোগ রাখতে চায় না। বিচার বিভাগের বিকল্প প্রস্তাবে জামায়াতের আপত্তি নেই বলেও জানানো হয়।


এনসিপি সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে ১১ সদস্যের সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে আট-তিন ভোটে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। ব্যর্থ হলে উচ্চকক্ষের র‌্যাঙ্ক চয়েজে ভোটের মাধ্যমে উপদেষ্টা নির্বাচন করতে চায় দলটি।


উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের বিষয়ে বিএনপি চায় সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে বণ্টন হোক। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল চায়, প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বণ্টন করা হোক। এ বিষয়ে চার দিনের সংলাপেও এখনো চূড়ান্ত ঐক্যমত্য হয়নি।

কমিশনের সমন্বয়ক মনির হায়দার বলেন, প্রস্তাবিত দুটি ফর্মুলাই আলোচনার ভিত্তি। সব দল নিজস্ব ফর্মুলা দেবে এবং পরবর্তীতে সম্মিলিত আলোচনা শেষে একটি চূড়ান্ত কাঠামো গৃহীত হবে।

ক্যাটাগরি:
কভার নিউজজাতীয়

কভার নিউজ ক্যাটাগরি থেকে আরো