বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত সব ধরনের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হতে পারে বলে জানানো হলেও, আলোচনার দরজা এখনো খোলা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ওই চিঠিটি তিনি নিজেই ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, “১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর—এটা অনেকটা নিশ্চিত, তবে শতভাগ নয়। যদি তারা (বাংলাদেশ) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কোনো বিকল্প প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।”
বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, “আমরা ভার্চুয়াল ও সরাসরি মিলিয়ে অন্তত সাতবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছি।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র দুই স্তরের পদ্ধতিতে আলোচনা চালাতে চায়—যার একটি স্তরে থাকবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি), যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। আরেক স্তরে থাকবে অন্যান্য উন্নত দেশ ও বাণিজ্যিক অংশীদার।
বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। এই দলে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আগামী ৯ জুলাই (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকের কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি দুই দেশের জন্যই লাভজনক একটি চুক্তি হবে। আলোচনা ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।”
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে রপ্তানিমুখী ভিয়েতনামের মতো আরও ভালো বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে ২০ শতাংশ শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে। তবে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠালে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ।
বাণিজ্য সচিব বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এখনো কোনো চূড়ান্ত বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি। আমরা একতরফা সিদ্ধান্ত নেব না—এটি হবে একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়া।”
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার। প্রধানত তৈরি পোশাক খাতেই বাংলাদেশ এই বাজারে নির্ভরশীল। ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের পণ্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প তার চিঠিতে আরও বলেন, “বাংলাদেশ যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমরাও সমানভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবো।”