পটিয়ায় যুবদল নেতার নেতৃত্বে অবৈধ বালু উত্তোলন, প্রশাসন জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না
পটিয়া প্রতিনিধি | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ২ নভেম্বর, ২০২৫
.jpg%3Fv%3D1762073524716&w=3840&q=75)
চট্টগ্রামের পটিয়ার শ্রীমাই খাল এখন যেন বালু খেকোদের স্বর্গরাজ্য। প্রতিদিন রাতভর ড্রেজার মেশিনের গর্জনে কেঁপে ওঠে খাল। আর ট্রাকভর্তি বালি চলে যায় অজানা গন্তব্যে। প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্র ছায়ায় প্রকাশ্যে চলছে এই 'বালু বাণিজ্য’। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাহুলী এলাকায় প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ড্রেজার মেশিনে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। ডজনখানেক ট্রাক বালি বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে খালের তীর ধসে পড়ছে, কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা।
অভিযোগ উঠেছে, পৌর যুবদল নেতা এস. এম. রেজা রিপন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এনামুল হক এনামের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। প্রশাসনের একাধিক অভিযানের পরও কার্যক্রম বন্ধ না হয়ে বরং আরও বেড়েছে।
অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১৩৩ কোটি টাকার শ্রীমাই খাল পুনর্খনন ও রাবার ড্যাম প্রকল্প এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে। ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪.৪ কিলোমিটার খালপাড়ে ব্লক বাঁধ এবং একটি আধুনিক হাইড্রোলিক অ্যালিভেটর ড্যাম নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে পটিয়া পৌরসভা, হাইদগাঁও, কেলিশহর ও কচুয়াই ইউনিয়নের প্রায় ১,১০৮ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে। ৩৭ কোটি লিটার পানি ধারণক্ষম এই ড্যাম স্থানীয় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে খালের তীর ভেঙে যাচ্ছে, পানি ধারণ ক্ষমতা কমছে এবং প্রকল্পের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন বলেন “ইজারাবিহীনভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হাইদগাঁও এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। সরকার যেখানে শত কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন করছে, সেখানে অসাধু সিন্ডিকেট তা ধ্বংস করছে।”
স্থানীয় কৃষক আব্দুল জব্বার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র আমাদের জমি নষ্ট করছে। প্রশাসন জানে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী এনামুল হক এনাম বলেন, “কোনো চোর–ডাকাত বা সন্ত্রাসীর স্থান আমার দলে নেই। রিপন অপরাধে জড়িত থাকলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিক। আমার নাম বা দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তার দায় আমি বা দল নেবে না।”
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, “ওই খালে কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান জানান, “কয়েকদিন আগেও আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। যদি পুনরায় এমন কার্যক্রম চালানো হয়ে থাকে, তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রীমাই খালের অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু একটি খাল নয়—একটি সরকারি প্রকল্প, কৃষকের জীবিকা ও পরিবেশের জন্যও হুমকি। প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ধ্বংস হবে ১৩৩ কোটি টাকার উন্নয়ন উদ্যোগ, আর হারিয়ে যাবে স্থানীয় কৃষকের ভবিষ্যৎ এমনই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সিটিজিপোস্ট/জাউ
.jpg%3Fv%3D1762095936217&w=3840&q=75)

.jpg%3Fv%3D1762087453327&w=3840&q=75)
.jpg%3Fv%3D1762086843227&w=3840&q=75)
