মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা আট বছরেও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সহিংসতার ধরন বদলালেও যৌন হয়রানি এখনও প্রায় সব ক্যাম্পেই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আশ্রয় নেওয়ার পর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে।
রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত গবেষণা ফলাফল প্রকাশ ও সংলাপ অনুষ্ঠানে এ তথ্য উঠে আসে। এতে সরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, দূতাবাস, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা, গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন। গবেষণার মাধ্যমে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের সুরক্ষাজনিত ঝুঁকি এবং তাদের নিজস্ব ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, মাত্র ৭ শতাংশ নারী স্বাধীনভাবে আইনি সহায়তা পান বলে জানিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৮ শতাংশ) মনে করেন পুরুষ ও ছেলেদের জন্য কাউন্সেলিং কর্মসূচি জরুরি। একইসাথে শিবিরে গড়ে ওঠা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মাদকের বিস্তার নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। প্রত্যাবাসন বিষয়ে বেশিরভাগ নারী ও কিশোরী মেয়ে (ক্যাম্পভেদে ৫০–৮২ শতাংশ) মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা তৃতীয় দেশে অভিবাসনের ইচ্ছা জানিয়েছেন।
অংশগ্রহণকারী নারীদের মতে, সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ক্যাম্প ইনচার্জ। কিন্তু যথাযথ প্রতিকার বা আইনগত সহায়তা সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। শতভাগ নারী জানিয়েছেন, সাজা হিসেবে শারীরিক নির্যাতন বা রেশন কার্ড বাতিল করা হয়। কিছু ঘটনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলেও ফলাফল অস্পষ্ট থাকে। বাস্তবে ক্যাম্প ইনচার্জ ছাড়া পুলিশের কাছে যেতে অধিকাংশই অনীহা প্রকাশ করেন। মাত্র ৭ শতাংশ নারী নিজের উদ্যোগে আইনি প্রতিকার চান বা প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় ভরসা রাখেন।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, যথাযথ সুরক্ষার অভাবে নারীরা মাঝি (ব্লক লিডার), ধর্মীয় নেতা বা কমিউনিটি নেতার শরণাপন্ন হন। তবে অভিযোগের পর পাল্টা আঘাত বা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে চান না। অভিযোগগুলোর ফলোআপ না হওয়ায় অনীহা আরও বেড়েছে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, গবেষণার ফলাফল শুধু তথ্য নয়, বরং রোহিঙ্গা নারীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জের প্রতিচ্ছবি। তাই নারী ও কিশোরীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির জানান, গবেষণাটি অংশগ্রহণমূলক। রোহিঙ্গা নারীরা নিজেরাই নিজেদের কথা বলেছেন। তারা প্রায় আট বছর ধরে এখানে রয়েছেন। মিয়ানমারে অন্যায়-অত্যাচারের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রথমদিকে কোনও আশ্রয়কেন্দ্র না থাকলেও এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সহিংসতা কমেনি, বরং রূপ বদলেছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা বহুমুখী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তাদের কণ্ঠস্বর স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—সময় নষ্টের সুযোগ নেই। এখনই কৌশলগত পরিবর্তন এনে দীর্ঘমেয়াদি, অধিকারভিত্তিক ও জেন্ডার-সংবেদনশীল উদ্যোগ নিতে হবে।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, এই সংকটকে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবিলা করা উচিত। বাল্যবিয়ে, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও নারীর চলাফেরার সীমাবদ্ধতা শুধু প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিকতার কারণ নয়, বরং ক্যাম্পের নিরাপত্তাহীনতা ও মৌলিক চাহিদা পূরণের সীমাবদ্ধতার ফলও বটে।
তারা মনে করেন, নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তনে কাউন্সেলিং জরুরি। একইসাথে নারী-বান্ধব স্থান, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় এবং ঝুঁকি কমে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন একশনএইড বাংলাদেশের হেড অব হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রাম মো. আব্দুল আলীম, পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার তামাজের আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউএনএইচসিআর’র ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জুলিয়েট মুরেকিসোনি, ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলী সিং, ইউরোপীয় কমিশনের সুশাসন বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন, ঢাকার নেদারল্যান্ডস দুতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর মুশফিকা সাতিয়ার প্রমুখ।
সিটিজি পোস্ট /এমসি
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অংশগ্রহণে ০৭ দিনব্যাপী ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’শীর্ষক যৌথ অনুশীলন গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এ সমাপ্ত হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পর...
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অংশগ্রহণে ০৭ দিনব্যাপী ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’শীর্ষক যৌথ অনুশীলন গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) তারিখে ব...