জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। রোববার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক বছরের মাথায় এই বিচার শুরু হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটি প্রথম (মিস) মামলা। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
চলতি বছরের ১২ মে তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী পলাতক দুই আসামির (হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ, অভিযোগ গঠন ও শুনানির মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ সোমবার নির্ধারিত রয়েছে।
এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে 'অ্যাপ্রুভার' বা রাজসাক্ষী হয়েছেন। রোববার তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার কিছু অংশ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আদালত অবমাননার এক মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যেটি তাঁর প্রথম সাজা। অন্যদিকে, গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় আরও একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রয়েছে, যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ২৪ আগস্ট ধার্য। হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে ১২ আগস্ট।
ট্রাইব্যুনালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “জুলাই বিপ্লবে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মাত্র ৩৬ দিনে গুলি করে ৩০ হাজার মানুষকে পঙ্গু ও প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।” তিনি এসব অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি একনায়কতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং তাঁর অধীনস্থরা তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখা।
তাজুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ছিলেন কোর কমিটির সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সরাসরি হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুন যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেন, যার ফলে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি নিরীহ ছাত্র আন্দোলনকারী নিহত হন। মামলাটি ১১টি প্রতীকী ঘটনার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে।
মামলার প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ ট্রাইব্যুনালে বলেন, তিনি গত বছরের ১৮ জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন এবং পরদিন বিজিবি ক্যাম্পের সামনে গুলিতে এক ব্যক্তিকে নিহত হতে দেখেন। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর পুলিশ গুলি চালায় এবং তিনি নিজে গুলিবিদ্ধ হন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গুলি তাঁর চোখ, নাক ও মুখে লাগে, মুখ বিকৃত হয়ে যায় এবং পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাশিয়া পাঠানো হয়। তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও শামীম ওসমানকে ‘হাজার হাজার মানুষ হত্যার’ জন্য দায়ী করেন।
সাক্ষ্য শেষে পলাতক আসামিদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরা করলে খোকন চন্দ্র বলেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের দলিল নেই, তবে তাঁর অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষদর্শিতেই তিনি তাঁদের দায়ী করেন।
মামলাটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়মিতভাবে চলবে এবং পরবর্তী শুনানিতে আরও সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস
৫ আগস্ট, ২০২৫
জুলাই বিপ্লবের নতুন ক্যালেন্ডারে তখনও “৩৬ জুলাই”।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের “ঢাকামুখী মহামিছিল” ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হয়েছিল। উত্তরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল জনতা।হঠাৎ খবর এল—উত্তরার অবস্থান থেকে সেনাবাহিনী সরে গেছে। যাত্রাবাড়ীতে তখনও চলছিল গোলাগুলি আর বিশৃঙ্খলা। চাঁনখারপুলে গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। তারপর এল সেই খবর, যা বদলে দিল সবকিছ...
৪ আগস্ট, ২০২৫
৪ আগস্ট, ২০২৫
৪ আগস্ট, ২০২৫
৩ আগস্ট, ২০২৫
৩ আগস্ট, ২০২৫
৫ আগস্ট, ২০২৫
জুলাই বিপ্লবের নতুন ক্যালেন্ডারে তখনও “৩৬ জুলাই”।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের “ঢাকামুখী মহামিছিল” ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হয়েছিল। উত্তরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল জনতা।হঠাৎ খবর এল—উত্তরার অবস্থান থেকে সেনাবাহিনী সরে গেছে। যাত্রাবাড়ীতে তখন...