২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উপস্থিত লাখো ছাত্র-জনতার সামনে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এক দফার ঘোষণা করেন। সে সমাবেশে লাখো ছাত্র-জনতার উপস্তিতিতে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব৷'
এক দফা সফল হয়েছে বটে। জন আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। অভ্যূত্থানের তিন দিন পর ড.ইউনূসের নেতৃত্বে ইন্টেরিম শপথ গ্রহণ করে। একটা রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পর দেশের আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছে জনগণ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ অনেকে ফ্যাসিবাদী সংবিধানের পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের পক্ষে বয়ান হাজির করেন। কবি ও চিন্তক ফরহাদ মঝহার নতুন গঠন্তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, টকশোতে আলোচনা করেন। বিএনপি ও বাম পন্থি দলগুলো কেবল সংবিধান সংশোধনের পক্ষে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত কিছু সংস্কার কমিশন ও সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য একটা ঐকমত্য কমিশন হয়। ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সাথে সিরিজ বৈঠক করে কিছু ব্যাপারে একমত হয়। একমত হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে একটা সনদের খসড়া ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে প্রকাশ করে। এখন তৃতীয় ধাপের বৈঠক শুরু হবে। তৃতীয় ধাপের আলোচনায় কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে গত পাঁচ-আগস্ট প্রায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতিতে মানিক মিয়া এভিনিউর সামনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৮-দফার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠানে বাম গণতান্ত্রিক জোট যোগ দেয়নি। বাম দলগুলো দাবি করেছে, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করা হয়নি, সে কারণে তারা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অভিযোগ করেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে 'ফ্যাসিবাদী' আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য আনার বদলে বিভাজন সৃষ্টির নীতি অনুসরণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। "এর সর্বশেষ উদাহরণ, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে বাদ দেওয়া। আমাদেরকেও বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা কেবল দর্শক হিসেবে সেখানে যেতে পারি না।"
২৮ দফা ঘোষণাপত্রের প্রথম ২১ দফায় অভ্যুত্থানের কারণ এবং শেষের ৭ দফায় আমাদের করণীয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, যা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ঘোষণাপত্রে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘গণবিরোধী’ দাবি করে তাদের শাসনে সংবিধানের অবৈধ পরিবর্তন, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও অর্থপাচারে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকার করে, অভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা ও আহতদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পূর্ব সরকারের অপরাধের দ্রুত বিচার করার অঙ্গীকারও রয়েছে। ঘোষণাপত্রে ভবিষ্যতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে সাংবিধানিক সংস্কার, আইনের শাসন, মানবাধিকার রক্ষা, দুর্নীতি নির্মূল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবং নির্বাচিত সরকার এ ঘোষণা পত্র সংবিধানে সংযুক্ত করবে বলে উল্লেখ আছে এই ঘোষণাপত্রে।
ঘোষণা পত্র পাঠ করার পরপর নেটিজেনদের মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শাপলা গণহত্যা ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ না থাকায় সাধারণ জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্রকে অসম্পূর্ণ বলে সমালোচনা করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এনসিপি ও জামাত ঘোষণা পত্র নিয়ে খানিকটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাপত্র পাঠের পর সময় সংবাদে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমি মনে করি, জুলাইয়ের যে আকাঙ্ক্ষা এই ঘোষণাপত্রে সেটার তেমন কোনো প্রতিফলন হয়নি। একটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমরা দেখেছি। এটা কোন তারিখ থেকে বাস্তবায়ন হবে? কালকে থেকেই বাস্তবায়িত হবে? সেটা কিন্তু স্পষ্ট করেনি। তাছাড়া আমরা এটাকে সংবিধানে প্রস্তাবনায় চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি।’
ডা. তাহের আরও বলেন, ‘উনারা যেটা বললেন, আগামী সরকার বাস্তবায়ন করবে। তাহলে বুঝা গেলো, এই সরকার কিছু করবে না। অথচ দায়িত্ব হচ্ছে এই সরকারের। এভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যুকে হালকাভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণাপত্র দেখলাম তাতে আমরা হতাশ। এই জাতি হতাশ।’
আখতার বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই ভূখণ্ডের মানুষের উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম রেফারেন্স পয়েন্ট ১৯৪৭-কে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা মনে করি, এই বাংলাদেশের বা এই ভূখণ্ডের একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং আমাদের চব্বিশের আন্দোলন—এই সবকিছুর একটি সম্মিলন এই ঘোষণাপত্রকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারত। এ ঘোষণাপত্রে (চব্বিশের) শহীদের সংখ্যার ব্যাপারে “প্রায় এক হাজার” শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ হাজার ৪০০ মানুষ এই অভ্যুত্থানের সময়কালে শহীদ হয়েছেন। এ পরিসংখ্যান আমাদের সবার জানা। সে ক্ষেত্রে এক বছর ধরে সরকার যে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে, তার একটা ছাপ আমরা এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে দেখতে পেলাম।’
তবে বিএনপি ঘোষণাপত্রে সন্তুষ্ট। জামাতের অসন্তোষের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন,
"হতাশ! যারা হতাশ হয় তারা সারাজীবনই হতাশ থাকে।"
ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, "প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাচ্ছি,"
জুলাই ঘোষণাপত্রকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বার্গম্যান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস আজ “জুলাই ঘোষণাপত্র” পাঠ করেছেন। এই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমার প্রাথমিক মতামত হলো : এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা ইতিহাসের বেশির ভাগ অংশ—একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নিয়ে বর্ণনা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। যাঁরা আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করেন, এতে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এই ঘৃণ্য দলটি সরকারে থাকাকালে যা করেছে শুধু সে জন্য নয়; বরং দলটি সম্পর্কে তাঁদের মনোভাবের জন্য—এটাকে একটি রাজনৈতিক বৈরিতা বলা যায়। ঘোষণাপত্রের অনেকটাই পড়ে মনে হয়, যেন এটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের বিরোধী ও সমালোচকদের লেখা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য।
ঘোষণাপত্র যতটুকু এসেছে এটা আমাদের অর্জন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জুলাই ঘোষণাপত্র আরও ওয়েল ড্রাফট করা যেত। যদি এখানে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জুলাইয়ের বেওয়ারিশ লাশ এবং আগুনে লাশ পুড়িয়ে ফেলার ইস্যুগুলো এড্রেস করা হলে জুলাই ঘোষণাপত্র আরও সুন্দর হত আরও জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হত।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাজা বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন রাজনৈতিক দলগুলো যেন এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে যে, একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও দেশের প্রশ্নে আমাদের এক থাকতে হবে। ভবিষ্যতে জুলাই ঘোষণার বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল বিষয়ে আমাদের এক থাকতে হবে। দেশ গড়ার জন্য, দেশের উন্নয়নে আমাদের এক থাকতে হবে, যদি আমরা দেশের কল্যাণে এক থাকতে না পারি তাহলে শত শহিদের রক্তের রেজাল্ট আমরা পাব না।
জুলাই ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ কি চায় না সেগুলো এখানে উঠে এসেছে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দীন তালুকদার বলেন, আমরা একসময় নতুন সংবিধানের কথা বললেও বিদ্যমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য জরুরি হচ্ছে ম্যাক্সিমাম মানুষকে একত্রিত করা, ম্যাক্সিমাম রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে ন্যুনতম একটা পরিবর্তন আনা। সবকিছু এ গভমেন্টকে দিয়ে করা সম্ভব না। নির্বাচিত সরকার এসে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করে তাহলে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবায়ের আরিফ বলেন, একটা ঘোষণাপত্র যে কোনো নতুন আকাঙ্খার কথা বলে। এই ঘোষণাপত্র জনগণের মধ্যে জুলাইয়ে যে নতুন কিছুর পিপাসা দেখা গিয়েছে সেটাকে যথাযথভাবে এড্রেস করা হয়নি। ঘোষণাপত্র বিএনপির দ্বারা প্রভাবিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ঘোষণাপত্রে ৭৫ এর সিপাহী বিদ্রোহকে একটি সিপাহি বিপ্লব বলা হয়েছে অথচ তখন দেশের তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। আর ২৪ এর গণ অভ্যুত্থান যেটাকে আমরা একটা বিপ্লবে রুপান্তর করার চেষ্টা সেটাকে গণ অভ্যুত্থান বলছে। ৭৫ এর সিপাহি বিদ্রোহ বিপ্লব হলে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থান কেন বিল্পব হবে না! এদিক থেকে দেখলে মনে হবে এটা একটা বিএনপির সাফাই গাওয়া ঘোষণা পত্র।
একটি ঘোষণাপত্র কি কোনো বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই তৈরি হওয়া উচিত, নাকি এটি নিজেই একটি নতুন সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তি হতে পারে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ও যোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক আর রাজির কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ২০২৪ এ কোনো বিপ্লব হলে ত, বিপ্লবের একটা ঘোষণাপত্র থাকবে এবং সে ঘোষণাপত্রের আলোকে নতুন সংবিধান রচিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো বিপ্লব হয়নি, হয়েছে একটা গণ অভ্যুত্থান। আমার দিক থেকে বলতে গেলে সেরকম কোনো গণ অভ্যুত্থানও হয়নি। হাসিনা যাকে তাকে রাজাকার বলে মানুষের আত্মমর্যাদাবোধের উপর আঘাত করেছে, মানুষ বিরক্ত হয়ে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে ফেলায় দিছে। হাসিনার এ পতনকে অনেকে বিপ্লবে রুপান্তর করার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু তারা সফল হয়নি। বিপরীতে বাংলাদেশের বিদ্যমান আমলাতান্ত্র, বড় রাজনৈতিক দল ও চিন্তাবিদ সবাই মিলে বিদ্যমান সংবিধানকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছে। এটা ভুল না ঠিক সেটা ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু সংবিধানের ভিতরে থেকে অন্তবর্তিকালিন সরকারের কাঠামো দাঁড় করানোর হয়েছে। এর বাইরে শহিদ মিনারে শপথ নিয়ে শুধু ছাত্রদের দ্বারা একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করা যেত কিন্তু তা হয়নি। বরং বঙ্গভবনে গিয়ে তখনকার রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কীভাবে সরকার গঠন করা হবে। তারপর মহাসম্মতভাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এসে প্রায় তত্তাবধায়ক সরকারের আদলে একটি অন্তবর্তিকালিন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছে যেখানে তাকে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে। এ অবস্থায় ড. ইউনুসের পক্ষে নতুন সংবিধান করার সুযোগ ও দায়িত্ব কিছুই ছিল না। আর রাজি বিদ্যমান সংবিধান ও ঘোষণা পত্রে বিএনপির প্রভাব সম্পর্কে বলেন, বিএনপি এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় দল, বিএনপির প্রভাব থাকতেই পারে। পঁচাত্তরের পনের আগস্টের পর জিয়া ক্ষমতায় আসলে তখন জিয়ার 'এ সংবিধান আমাদের লাগবে' কোট করে আর রাজি বলেন, বিএনপি বরাবরই সংবিধান বাতিলের বিরুদ্ধে ছিল।
ঘোষণাপত্র হলো আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক দলিল, যেখানে তাদের লক্ষ্য, নীতি, দাবি ও কর্মপরিকল্পনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে এবং যা জনগণ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তুলে ধরে। বিশ্বের বহু দেশেরই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রয়েছে, যা তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গণ্য হয়। ঘোষণাপত্র ও সংবিধানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ঘোষণাপত্র সাধারণত আদর্শিক রূপরেখা হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তীতে সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা ও কাঠামো নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। ঘোষণাপত্রে যে লক্ষ্য ও নীতির কথা বলা হয়, সংবিধান সেগুলোকে আইনগত রূপ দিয়ে বাধ্যতামূলক কাঠামো তৈরি করে। ইতিহাসে দেখা গেছে, স্বাধীনতা আন্দোলন বা বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় ঘোষণাপত্র আগে আসে এবং সেখান থেকেই সংবিধানের ভিত্তি গড়ে ওঠে যেমন ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা ও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা।
জুলাই অভ্যুত্থান সেরকম ঘোষণা দিয়ে না হলেও অভ্যুত্থানের পর জুলাই ঘোষণাপত্র ছিল ছাত্রদের অন্যতম দাবি। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি এককভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে চাইলে রাজনৈতিক দল ও এক্টিভিস্টদের সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তারা পিছিয়ে আসে। এরপর বিভিন্ন আলোচনায় জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি আসলেও বড় দল বিএনপির আপত্তির মুখে পিছিয়ে যায় জুলাই ঘোষণাপত্র। অবশেষে সমস্ত তর্কবিতর্ক শেষে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন। নানান ভিন্নমত থাকলেও সবাই জুলাই ঘোষণাপত্রকে অনেক বড় অর্জন হিসেবে দেখছে।
জমীর আলী /সিটিজি পোস্ট
১২ আগস্ট, ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) থেকে প্রচলন করা হবে।গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।নতুন নোটের ডিজাইনে দেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্...
১২ আগস্ট, ২০২৫
১২ আগস্ট, ২০২৫
১২ আগস্ট, ২০২৫
১২ আগস্ট, ২০২৫
১২ আগস্ট, ২০২৫
১২ আগস্ট, ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) থেকে প্রচলন করা হবে।গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক...