তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের এই বিবাদই ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

মজিবুর রহমান মঞ্জু সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতা আজ হুমকির মুখে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নেতার বক্তব্য ও স্লোগানে রাজনৈতিক শালীনতার সীমা অতিক্রম করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা জাতীয় নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে বেড়েই চলেছে।

তিনি আরও জানান, বিএনপির বিরুদ্ধে একটি বিকল্প নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার প্রচেষ্টা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ কেউ দুই শিবিরের সাথেই ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলেও জানান তিনি। এসব কারণে ফ্যাসিবাদী শক্তির পথ আরও মসৃণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব মো. জাহিদুল করিম কচি এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আহবায়ক এডভোকেট গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও হাটহাজারী থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম পিএসসি, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ লোকমান, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, মহানগর সদস্য সচিব এডভোকেট সৈয়দ আবুল কাসেম ও হায়দার আলী চৌধুরী।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দৈনিক কালের কণ্ঠ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসসের সিনিয়র সাংবাদিক মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, ইসলামিক টিভির সাবেক ব্যুরোচিফ শহিদুল ইসলাম, নিউজগার্ডেন সম্পাদক কামরুল হুদা, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো চীফ মজুমদার নাজিম, এই বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মিন্টু, দৈনিক দিনকালের ব্যুরো চীফ হাসান মুকুল, সাংবাদিক মাহাবুবুল মাওলা রিপন, মোহাম্মদ আলী পাশা, দিদারুল হক, মোহাম্মদ তোহা সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করেছে কিছু সাংবাদিক নামধারী এক্টিভিস্ট। তিনি বলেন, আদর্শ ও মতভেদ থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আওয়ামী লীগের সাথে রিকনসিলিয়েশন সম্ভব হলেও তার আগে তাদেরকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাদের ভুল স্বীকার করতে হবে। তিনি মন্তব্য করেন, যারা গণহত্যা, গুম, খুন, লুটপাটের পরও গলা উঁচু করে কথা বলে, তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছিল ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান ও দৈনিক আমার দেশ। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বহু সাংবাদিককে বেকার করে দেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিক সমাজকে নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট করা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও তাঁকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ফরম পূরণের পরেও সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। অনেক প্রবীণ সাংবাদিককেও সদস্য করেনি সেই সময়ের সাংবাদিক নেতারা। দলান্ধ সাংবাদিকেরা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত এবং সাধারণ জনতাকে গুলি করতে উৎসাহ দিত।

মঞ্জু বলেন, আমাদের ভুলে যেন আর ফ্যাসিবাদের উত্থান না ঘটে, সেজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যাত্রাবাড়ী ও ভান্ডারিয়ায় জুলাইয়ের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক জায়গায় আন্দোলন থামলেও আরেক জায়গায় তা শুরু হয়েছে। এমনকি পুলিশও চিন্তিত ছিল যে, কিভাবে এই আন্দোলন থামানো যাবে। তিনি বলেন, যাদের নাম আমরা আগে কখনো শুনিনি, সেই সারজিস, নাহিদ ও হাসনাতরাই আমাদের নতুন স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে। যারা ১৫/১৭ বছর আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের উচিত এখন ঐক্যের গুরুত্ব বুঝে কাজ করা। ঐক্য ও সংহতির বিষয়ে কোন ছাড় নেই বলেও মন্তব্য করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান।

সিটিজিপোস্ট/এমএইচডি