চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বার্থিং সুবিধা ও নিরাপদ পোতাশ্রয় (পোতাশ্রয়- নদী বা সমুদ্র তীরবর্তী জলবেষ্টিত এলাকা যেখানে বড় বড় নৌকা বা জাহাজ ভীড় করে) গড়ে তুলতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাঙ্গু ও শিকলবাহা নদীকে ঘিরে বড় পরিকল্পনায় নেমেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ দুই নদীকে নদীবন্দর ঘোষণা করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বার্থিং জোন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি, যা চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে প্রতিদিন চলাচল করা শত শত লাইটারেজ জাহাজের নিরাপদ আশ্রয় ও পণ্য পরিবহন কার্যক্রমে গতি আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিদিন কর্ণফুলী নদীতে গড়ে এক হাজার লাইটারেজ জাহাজ নোঙর করে, যার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং বন্দর চ্যানেলে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন পোতাশ্রয় গড়ে উঠলে কর্ণফুলীর উপর চাপ অনেকটাই কমবে। সাঙ্গু নদীর অভ্যন্তরে বাঁশখালী উপজেলার অংশে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে নিরাপদ বার্থিং জোন স্থাপন করা হবে, যেখানে লাইটারেজ জাহাজগুলো নিরাপদে অবস্থান করতে পারবে, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ও বিরূপ আবহাওয়ার সময়।
চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন নিম্নচাপ ও ঝড়ের কারণে জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়, অনেক জাহাজ তীরে উঠে যায় কিংবা ডুবে যায়। পারকি ও পতেঙ্গা উপকূল ছাড়াও কর্ণফুলী নদী এবং সন্দ্বীপ চ্যানেলেও এরকম দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। তাই সাঙ্গু নদীতে নিরাপদ পোতাশ্রয় গড়ে তোলা হলে এসব বিপর্যয় রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন নৌ-খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার নদীগুলো নানাভাবে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। শিকলবাহা ও সাঙ্গু নদী কর্ণফুলীর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকায় এখানে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নদীবন্দর ঘোষণার মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বন্দরসংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ বার্থিং পয়েন্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
নদীবন্দর ঘোষণার উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর বিআইডব্লিউটিএ একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে, যার আহ্বায়ক ছিলেন সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। কমিটির সদস্যরা ফেব্রুয়ারিতে সাইট পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন, যা বর্তমানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতিতে রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী, নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের মতামতের ভিত্তিতে সাঙ্গু নদীতে নদীবন্দর ও আঞ্চলিক নৌরুট তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিকলবাহা নদীটি সাঙ্গু থেকে উৎপন্ন হয়ে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে। এই নদীর দুই পাড়ে ইতোমধ্যে পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফোরশোর সুবিধা নিয়েছে, যার মাধ্যমে সরকার বছরে ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করছে। অন্যদিকে সাঙ্গু নদীর মোহনায় রয়েছে অনেক লাইটারেজ জাহাজ, ছয়টি বরফকল এবং কয়েকটি কাঁচাঘাট। নদীটি প্রশস্ত ও গভীর হওয়ায় এখানে নৌ-চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নাব্যতা রয়েছে। ফলে মোহনা থেকে দোহাজারী রেলসেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে নদীটি নৌ-বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
শিকলবাহা নদীর আনোয়ারা অংশে ইতোমধ্যে ‘আনোয়ারা ইকোনমিক জোন ১ ও ২’-এর নির্মাণ কাজ চলছে। অপরদিকে সাঙ্গু নদীর দুই পাশে আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর পণ্য পরিবহনের জন্যও এই নদী কার্যকর অবদান রাখতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য হাজার হাজার লাইটারেজ জাহাজে সারা দেশে পরিবহন করা হয়। কিন্তু পরিকল্পিত বার্থিং জোন না থাকায় লাইটারেজগুলো যেখানে-সেখানে পড়ে থাকে। সাঙ্গু ও শিকলবাহা নদীকে কাজে লাগাতে পারলে এসব জাহাজকে সুশৃঙ্খলভাবে বার্থিং করানো, পণ্য দ্রুত পরিবহন এবং সরকারের রাজস্ব আয়- সবকিছুই বৃদ্ধি পাবে।’
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের অধীনে থাকা লাইটারেজ জাহাজগুলো কার্গো লোডিংয়ের জন্য অনেক সময় এক মাস পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০ জাহাজকে সমুদ্রে অপেক্ষা করতে হয়, যেখানে আবহাওয়া প্রায়ই থাকে অশান্ত। ফলে দীর্ঘসময় সাগরে থাকা অনিরাপদ হয়ে পড়ে। সাঙ্গু নদীতে বার্থিং জোন তৈরি হলে এসব জাহাজ সহজেই মোহনা থেকে সাঙ্গু ব্রিজ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে নিরাপদ আশ্রয় পাবে।
নৌ-পরিবহন সংশ্লিস্টরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত নদীবন্দরটি সড়ক ও নৌপথে সংযুক্ত থাকায় ভবিষ্যতে এখানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ভেসেল সেন্টার, মাছ অবতরণ কেন্দ্র, বাজার ও নৌ-বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেটি নির্মাণ ও নৌপরিবহনের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হলে বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বহুগুণে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিটিজিপোস্ট/এমএইচডি
২৩ আগস্ট, ২০২৫
কর্ণফুলী উপজেলার ফকিরনীর হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার থেকে ট্রাকভর্তি প্রায় ৫ লাখ টাকার ৪৭ ড্রাম বাগদা চিংড়ির পোনা জব্দ করেছে প্রশাসন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, "কক্সবাজার থেকে চিংড়িপোনা চট্টগ্রামে আনার সংবাদ পাওয়ার ভিত্তিতে ফকিরনীর হাট এলাকায় তল্লাশি চা...
২৩ আগস্ট, ২০২৫
২৩ আগস্ট, ২০২৫
২৩ আগস্ট, ২০২৫
২৩ আগস্ট, ২০২৫
২৩ আগস্ট, ২০২৫
২৩ আগস্ট, ২০২৫
কর্ণফুলী উপজেলার ফকিরনীর হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার থেকে ট্রাকভর্তি প্রায় ৫ লাখ টাকার ৪৭ ড্রাম বাগদা চিংড়ির পোনা জব্দ করেছে প্রশাসন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল হালিম ...