গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে ঘটনায় চারজন নিহত এবং পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে ঘটনায় চারজন নিহত এবং পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠানো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির ’জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জের পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে এক জনসমাবেশের ঘোষণা দেয় এনসিপি। সমাবেশে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল মহানগরীর সদর থানার সার্কিট হাউজ এলাকা থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
সকাল থেকেই সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন তৎপর ছিল। তবে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের সন্ত্রাসী দল আইনশৃঙ্খলা ডিউটিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এই হামলায় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
সকাল ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে প্রায় ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় গোপালগঞ্জ ইএনও'র গাড়ি উক্ত স্থানে এলে সেটি ভাঙচুর করা হয়।
এর কিছুক্ষণ পরেই কোটালীপাড়া থানার অবদার হাট এলাকায় কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রায় ২৮০০ থেকে ৩০০০ কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সার হাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে রাখে। একই সময়ে, সকাল সাড়ে ১১ টার গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌরসভার মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই দুপুর দেড়টার দিকে "জয় বাংলা" স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঢাল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। যদিও দুপুর ২টার সময় নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উঠতে সক্ষম হন।
এদিকে, দুপুর ২:১৫ টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে।
পদযাত্রা সভা সমাপ্ত করে এনসিপির নেতৃবৃন্দ সভাস্থল ত্যাগ করেন। এই সভায় প্রায় ২০০ জন লোক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তাদের গাড়িবহর পরবর্তী পদযাত্রা সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রওনা দিলে দুপুর ৩টায় গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চ ঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গাড়িবহর আটকে দেয় এবং গাড়িতে হামলা করে।
এসময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথা না শুনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ এনসিপির নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ করে। এছাড়াও, নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। এই সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন এবং প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
নাশকতাকারীদের আক্রমণের মুখে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতাকর্মীদের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিরাপদে সরিয়ে আনে। পরবর্তীতে বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ গাড়িবহর নিয়ে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
এদিন উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ পোস্টমর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
এ পর্যন্ত যৌথবাহিনী ও পুলিশ নাশকতার ঘটনার সাথে জড়িত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে ১৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৭জুলাই) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে চলমান কারফিউ আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ বন্ধ থাকবে।
সিটিজিপোস্ট/এসএমএফ
১৮ জুলাই, ২০২৫
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় চালুর লক্ষ্যে সংস্থাটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সরকার।জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ইউএনএইচআরসি) শুক্রবার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশ সরকার চলতি সপ্তাহে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে, য...
১৮ জুলাই, ২০২৫
১৮ জুলাই, ২০২৫
১৮ জুলাই, ২০২৫
১৭ জুলাই, ২০২৫
১৭ জুলাই, ২০২৫
১৮ জুলাই, ২০২৫
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় চালুর লক্ষ্যে সংস্থাটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সরকার।জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ইউএনএইচআরসি) শুক্রবার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘ...