রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন ভবনে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনা পরিকল্পিত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি বলেছে, অফিসে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ধ্বংস করতেই এই আগুন লাগানো হয়।
সোমবার (২৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে পিবিআইয়ের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (এসআইঅ্যান্ডও) ইউনিটের (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের পুলিশ কমিশনার মো. আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আশরাফুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম থেকে ও অন্যজন মো. জাহিদুল ইসলামকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা ২০ মিনিটে, বিয়াম ভবনের ৫০৪ নম্বর কক্ষে। সেখানেই বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিস ছিল। বিস্ফোরণে অফিস সহায়ক আবদুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান গাড়িচালক ফারুক।
আগুনে পুড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নথি, দলিল, জমির কাগজপত্র, ব্যাংক চেকবইসহ বিভিন্ন আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী।
আবদুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঘটনার রাতে এক ব্যক্তি মুখে মাস্ক, মাথায় মাস্কিং ক্যাপ, হাতে গ্লাভস পরে ভবনের পাঁচতলায় প্রবেশ করেন এবং একটি সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। তাঁর নাম আশরাফুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার আশরাফুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বিয়াম ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। তিনি আশরাফুলসহ মালেক ও ফারুককে নিয়ে পুরো ঘটনার পরিকল্পনা করেন। তাদের ১০-১২ লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়েছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে আশরাফুল প্রথমে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করেন, পরে মালেক ও ফারুক অফিসকক্ষে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঠিক তখনই সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মালেক, গুরুতর দগ্ধ হন ফারুক।
পিবিআই বলছে, আসামিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমিতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ধ্বংস করা। কিন্তু আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ হবে তা তারা বুঝতে পারেননি। ফলে তাদের সহযোগী দুজন প্রাণ হারান।
পিবিআই জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত তদন্তের প্রথম ধাপ শেষ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে তদন্ত করা হবে যে, নথিগুলোতে কী ধরনের তথ্য ছিল এবং এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না।
পিবিআই কমিশনার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের একটি ক্যামেরা বন্ধ করা হলেও বাকি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে আমরা মাস্ক পরা একজনের ছবি পাই। তারপর এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তার পূর্ববর্তী আগমন-প্রস্থানের ছবি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হই যে সে আশরাফুল। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’’
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস